প্রায় তিন দশকের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে নেপচুনে দেখা যেত যে মেঘ, তা অদৃশ্য হয়ে গেছে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া (UC) বার্কলের নেতৃত্বে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল ২০১৯ সালে এই দৈত্যাকার বরফ গ্রহের মধ্য-অক্ষাংশে মেঘের প্রাচুর্য আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু চার বছর পরে, গত জুনে নেওয়া ছবি থেকে দেখা যায় যে মেঘগুলো তাদের আগের স্তরে ফিরে আসেনি। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই বড়ো নীল গ্রহের ছবি হাওয়াই দ্বীপের মাউনাকেয়া থেকে ডব্লিউ এম কেক অবজারভেটরির লেন্সের মাধ্যমে ধরা হয়েছিল। এর সাথে NASA-এর হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাকাশের দৃশ্য থেকে দেখা যায় দক্ষিণ মেরু বাদ দিয়ে এই মেঘ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ইকারাস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, এই পর্যবেক্ষণগুলো নেপচুনের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া মেঘ এবং সৌরচক্রের মধ্যে একটি সংযোগ প্রকাশ করছে। আশ্চর্যজনক হল যে নেপচুন সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ এবং পৃথিবীতে আমরা যে সূর্যালোক পাই তার মাত্র ১/৯০০ ভাগ নেপচুনে পৌঁছোয়।
নেপচুনের মেঘের আচ্ছাদন এবং সৌর চক্রের পরিবর্তনের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় প্যাটার্ন দেখা যায়। যখন সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র প্রতি ১১ বছরে উল্টে যায়, তখন সৌর বিকিরণের মাত্রা ওঠানামা হয়। সূর্য যখন আরও তীব্র অতিবেগুনি (UV) আলো, বিশেষত শক্তিশালী হাইড্রোজেন লাইম্যান-আলফা নির্গমন করে, তার প্রায় দুই বছর পরে নেপচুনে আরও মেঘের অস্তিত্ব দেখা যায়। দলটি মেঘের সংখ্যা এবং সূর্যের আলো থেকে প্রতিফলিত হওয়া এই বরফের গ্রহের উজ্জ্বলতার মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। তাদের অনুসন্ধানগুলো এই তত্ত্বকে সমর্থন করে যে সূর্যের খুব শক্তিশালী অতিবেগুনী রশ্মি, নেপচুনের মেঘ তৈরি হওয়ার জন্য দায়ী, এটা একটা আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ট্রিগার করতে পারে, যাতে মেঘ জমে।
নেপচুনীয় পর্যবেক্ষণের ২৯ বছর যাবত রেকর্ড করা নেপচুনের মেঘলা আবহাওয়া প্যাটার্নের ভিত্তিতে দেখা গেছে, ২০০২ সালে এই গ্রহের প্রতিফলন সবচেয়ে বৃদ্ধি পায় তারপর ২০০৭ সালে তা ম্লান হয়, ২০১৫ সালে গ্রহটা আবার উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তারপর ২০২০ সালে সর্বাপেক্ষা অন্ধকার হয়ে যায়, যখন বেশিরভাগ মেঘ চলে যায়। সূর্যের জন্য নেপচুনের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন ও এই গ্রহে মেঘের আগমন এবং যাওয়া ঘটে বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।