২০১৭ সালে, বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি খুঁজে পেয়েছিলেন। তারা দেখেন গোধূলির আলোতে কিছু ব্যাঙ জ্বলজ্বল করে আর এর কারণ হল এক ধরনের ফ্লুরোসেন্ট যৌগ যা প্রকৃতিতে আগে দেখা যায়নি। সেই সময় এটা জানা যায়নি যে কতগুলো প্রজাতির ব্যাঙ এই ফ্লুরোসেন্স নির্গত করতে পারে কিন্তু সম্প্রতি করা এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে বহু প্রজাতির ব্যাঙ এটি করে থাকে। দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায় এমন ১৫১ প্রজাতির ব্যাঙের মধ্যে দেখা গেছে যে প্রতিটি ব্যাঙ অর্থাৎ ৫২৮টি ব্যাঙের কম বেশি হলেও আলো বিচ্ছুরণ করার ক্ষমতা রয়েছে। দেখা গেছে ব্যাঙের এই বৈশিষ্ট্য তাদের পরিবেশ ও তাদের দৃষ্টিশক্তির সঙ্গে সাযুজ্য বজায় রাখে এবং একে অপরকে সংকেত দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং সম্ভবত শিকারীদের থেকে নিজেদের বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফ্লুরোসেন্স হল এমন এক ধরনের আভা যা আলো শোষিত হলে এবং একটি ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পুনরায় নির্গত হলে তৈরি হয়। এই বৈশিষ্ট্যটি ক্যাটশার্ক, গিরগিটি, সালামান্ডার এবং মনোট্রেম নামের একধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী যা অস্ট্রেলিয়ায় দেখতে পাওয়া যায় এবং মার্সুপিয়াল সহ অনেক প্রজাতির মধ্যে দেখা যায়। আমাদের শরীরের হাড়েরও এই বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ব্যাঙের ত্বকে উত্পাদিত বায়োফ্লুরেসেন্স অন্যান্য প্রাণীদের ফ্লুরোসেন্স থেকে আলাদা বলে মনে করা হয়। হুইচার এবং তার দল দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৫২৮টি ব্যাঙ অধ্যয়ন করেছেন এবং তাদের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে দৃশ্যমান বর্ণালীর আলো দিয়ে দেখে তথ্য নথিভুক্ত করেছেন।
ব্যাঙগুলো যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোর মধ্যে উন্মোচিত হয়েছিল, তার মধ্যে নীল আলো, যা পৃথিবীর প্রাকৃতিক গোধূলির সবচেয়ে কাছাকাছি রঙ ছিল সেই আলোতে সবচেয়ে শক্তিশালী ফ্লুরোসেন্স তৈরি করেছিল। এবং ফ্লুরোসেন্সের এই বৈশিষ্ট্য মূলত দুটি ভিন্ন দৃশ্যমান-আলোর শিখরে ঘটেছে – একটি সবুজ এবং একটি কমলা।
ব্যাঙেরা গোধূলিতে বেশি সক্রিয় থাকে, ভোর ও সন্ধ্যার আবছা আলোতে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিছু প্রজাতির ব্যাঙের চোখের গঠন এমন যে সেটি এই আলোতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে বিশেষ করে সবুজ এবং নীল আলোতে। সবুজ আলোতে তাদের চোখের রড ফটোরিসেপ্টর সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। গবেষকরা দেখেছেন যে সবুজ-সংবেদনশীল রড ফটোরিসেপ্টর ব্যাঙের চোখের রেটিনাল এলাকার প্রায় ৬০% দখল করে থাকে। অর্থাৎ তাদের সবুজ আভা দিনের সেই সময় সবচেয়ে উজ্জ্বল হয় যখন ব্যাঙেরা সবচেয়ে সক্রিয় থাকে এবং তাদের চোখ বিশেষভাবে সংবেদনশীল রঙে উজ্জ্বল হয়। ব্যাঙেদের শরীরের সেই অংশগুলো বেশি উজ্জ্বল দেখায় যেগুলো অন্যান্য ব্যাঙেদের সংকেত দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যেমন গলা এবং পিঠ। অন্যদিকে কমলা রঙের ক্ষেত্রে গবেষকরা অনুমান করছেন যে হয়তো এটি অন্যান্য শিকারীদের দূরে থাকার জন্য সতর্ক করছে।