২০০৬ সাল থেকে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় মিথেনের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। মনে করা হচ্ছে যে মিথেনের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে নয় বরং জৈবিক নির্গমনের কারণে ঘটছে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন যে পৃথিবীর জলবায়ুতে একটি অন্যরকমের পরিবর্তন শুরু হয়েছে। কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় মিথেন অনেক বেশি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস। কিন্তু CO₂ এর মতো এর আয়ু ১০০ বছর নয়। মিথেন বায়ুমণ্ডলে এক দশকেরও কম সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। মিথেন নির্গমনের ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধিকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মাত্রায় সীমিত করা সম্ভব হবে না। এর চেয়েও বেশি উদ্বেগের বিষয় বায়ুমণ্ডলে যে হারে মিথেন বাড়ছে তা সম্প্রতি ত্বরান্বিত হয়েছে। বহু শতাব্দী পূর্বে মিথেনের আকস্মিক উত্থান ঠান্ডা বরফ যুগ বা আইস এজ থেকে উষ্ণ আন্তঃগ্লাসিয়াল জলবায়ুতে রূপান্তরকে চিহ্নিত করেছে।
মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো শুরু করার আগে বাতাসে মিথেনের পরিমাণ ছিল প্রতি মিলিয়ন (পিপিএম)-এর প্রায় ০.৭ অংশ। এখন এর পরিমাণ ১.৯ পিপিএম, এবং এটি দ্রুত বাড়ছে। নির্গমনের প্রায় তিন-পঞ্চমাংশ আসে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার, কৃষিকাজ, ল্যান্ডফিল এবং বর্জ্য থেকে। অবশিষ্ট অংশ আসে প্রাকৃতিক উৎস বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উত্তরের জলাভূমিতে পচনশীল গাছপালা থেকে।
বিজ্ঞানীরা মিথেনকে চালক বা সূচক বলে অভিহিত করেছেন এবং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বার্তাবাহকও বটে। গবেষকদের মতে ২০০৬ সালের শেষের দিক থেকে মিথেনের এই আকস্মিক বৃদ্ধির ধরন সুদূর অতীতে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন মিথেনের এই বৃদ্ধির জন্য দায়ী জলাভূমি থেকে নতুন নির্গমন, বিশেষ করে বিষুবরেখার কাছাকাছি অঞ্চল এবং সম্ভবত কানাডা ও সাইবেরিয়া থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমবর্ধমান বৃষ্টিপাত জলাভূমিকে আরও আর্দ্র এবং আকারে বড়ো করে তুলেছে আর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা গাছের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তুলছে ফলত আরও পচনশীল পদার্থ তৈরি হচ্ছে এবং আরও বেশি মিথেন সরবরাহ হচ্ছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় আফ্রিকা, ভারত এবং ব্রাজিলের বিশাল গবাদি পশু পালন থেকে মিথেন নির্গমন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দিল্লির মতো মেগাসিটির কাছাকাছি ল্যান্ডফিলগুলোতে পচনশীল বর্জ্যও মিথেনের গুরুত্বপূর্ণ উত্স।
জলবায়ু পরিবর্তনের অনেক প্রমাণ আমরা ইতিমধ্যেই পেয়েছি যেমন- আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোত মন্থর হচ্ছে, গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়া অঞ্চলগুলো প্রসারিত হচ্ছে, সুদূর উত্তর এবং দক্ষিণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে, সমুদ্রে জলের তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং চরম আবহাওয়া এখন প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠছে। এরপর কী ঘটতে চলেছে তা কল্পনা করা কঠিন: গ্রীষ্মে আর্কটিকের সামুদ্রিক বরফের ক্ষতি, গ্রিনল্যান্ড এবং পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকায় বরফ পাতলা হয়ে আংশিক ধসে যাওয়া এবং আটলান্টিকের সমুদ্র স্রোতের পুনর্গঠন এসবই একটা দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাহলে কী আমরা আমরা আরও উষ্ণ জলবায়ুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি? মিথেনের দেওয়া সংকেত এখনও অস্পষ্ট।