পৃথিবীতে বসবাসকারী আটশো কোটিরও বেশি মানুষের গায়ের, চুলের বা চোখের রঙ নির্ধারণ করে মেলানিন। মেলানিন এক ধরনের আলো-শোষণকারী পিগমেন্ট যা মেলানোসোম নামক বিশেষ অঙ্গাণুর মধ্যে উত্পন্ন হয়। মেলানোসোম মেলানিন- উৎপাদনকারী রঞ্জক কোষের অভ্যন্তরে পাওয়া যায় যাকে মেলানোসাইট বলে। যদিও সব মানুষের শরীরে একই সংখ্যক মেলানোসাইট রয়েছে, তবে তাদের উৎপাদিত মেলানিনের পরিমাণ ভিন্ন আর তাই মানুষের ত্বকের রঙের এই বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। এই ভিন্ন পরিমাণে মেলানিন তৈরি হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেন ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ সাসটেইনেবল কেমিক্যাল, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সহকারী অধ্যাপক বিবেক বাজপাই। তাদের এই গবেষণাটি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়। তারা CRISPR-Cas9 নামক এক প্রযুক্তি ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ মেলানোসাইট থেকে ২০,০০০-এর বেশি জিনকে পদ্ধতিগতভাবে আলাদা করেন এবং মেলানিন উৎপাদনের উপর এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন।
নির্দিষ্ট যে জিন মেলানিন উত্পাদনকে প্রভাবিত করে তা সনাক্ত করার জন্য তারা লক্ষ লক্ষ অন্যান্য কোষ থেকে জিন অপসারণ প্রক্রিয়ার সময় মেলানিন হারানো কোশগুলো আলাদা করেন। এর জন্য তিনি এক অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করেন যা মেলানোসাইটের মেলানিন উৎপাদন ক্ষমতা ও তার পরিমাণ নির্ধারণ করে। মেলানোসাইটের ভিতর দিয়ে আলোক রশ্মি পাঠিয়ে তিনি দেখার চেষ্টা করেন যে মেলানোসাইটের ভিতরে আলোটি মেলানিন দ্বারা শোষিত হয়েছে না বিচ্ছুরিত হয়েছে। সাইড-স্ক্যাটার অফ ফ্লো সাইটোমেট্রি নামক একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, কোশে মেলানিনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে কোশগুলো আলাদা করেন। এবং পরে নতুন এবং পূর্বে পরিচিত উভয় জিন সনাক্ত করেন যা মানুষের মেলানিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা ১৬৯ টি ভিন্ন জিন আবিষ্কার করেন যা মেলানিন উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে, ১৩৫ টি জিন আগে পিগমেন্টেশনের সাথে যুক্ত ছিল না। তারা আরও দুটি নতুন আবিষ্কৃত জিন- KLF6 এবং COMMD3-এর কাজ শনাক্ত করেন। ডিএনএ-বাইন্ডিং প্রোটিন KLF6 মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর মেলানিন উৎপাদনের ক্ষমতা নাশ করে। COMMD3 প্রোটিন মেলানোসোমের অম্লতা নিয়ন্ত্রণ করে মেলানিন সংশ্লেষণ নিয়ন্ত্রিত করে।
গবেষকদের মতে মেলানিন কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তা চিহ্নিত করা গেলে ফর্সা ব্যক্তিদের মেলানোমা বা ত্বকের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। তারা বলেন যে এই নতুন মেলানিন জিনের উপর লক্ষ্য রাখলে ভবিষ্যতে শ্বেতী বা অন্যান্য পিগমেন্টেশন রোগের জন্য ওষুধও তৈরি করা যেতে পারে।