গবেষকরা প্রকৃতির কিছু উজ্জ্বল রঙের আড়ালে লুকিয়ে থাকা জেনেটিক কোড আবিষ্কার করেছেন। PNAS জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় প্রজাপতির ডানা এবং ময়ূরের পালকের রঙের ক্ষেত্রে যে জিনগত কারণ রয়েছে তা অধ্যয়ন করা হয়েছে এবং জীব জগতে এই রঙের বৈচিত্রের যে জিনগত কারণ রয়েছে সেই বিষয়ে গবেষণার দিশা দেখিয়েছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডাচ কোম্পানি Hoekmine BV-এর যৌথ উদ্যোগে গবেষণাটি করা হয়েছে যা দেখিয়েছে যে জিনগত কারণে কীভাবে কিছু রঙিন ব্যাকটেরিয়ার রঙ এবং রূপ পরিবর্তিত হয়। গবেষকরা, ন্যানোস্ট্রাকচারযুক্ত উপকরণের বড়ো মাপের উত্পাদনের জন্য এই ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন করার কথা ভাবছেন যার সাহায্যে বায়োডিগ্রেডেবল ও বিষাক্ত নয় এমন কিছু পেইন্ট কৃত্রিম উপায়ে তৈরি না করে উৎপন্ন করা যেতে পারে।
ফ্ল্যাভোব্যাক্টেরিয়াম নামে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া কলোনি তৈরি করে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া ০.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের এবং এদের আকৃতি অনেকটা রড বা নলের মতো। এদের কলোনি নল বা সিলিন্ডারের স্তূপের মতো সুশৃঙ্খল আকারে সজ্জিত থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া এক ধরনের আকর্ষণীয় ধাতব রঙ তৈরি করে, যার উৎস রঙ্গক নয় বরং তাদের অভ্যন্তরীণ গঠন যা নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যে আলো প্রতিফলিত করে। বিজ্ঞানীরা আজও বিস্মিত কীভাবে এই জটিল গঠন জিনগতভাবে প্রকৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কেমব্রিজের রসায়ন বিভাগের গবেষক, ভিলাডস এগেডে জোহানসেনের মতে প্রকৃতি কীভাবে এই ন্যানোস্ট্রাকচারগুলো তৈরি করে তা ভালোভাবে বোঝার জন্য রঙের জন্য দায়ী জিন চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিন কীভাবে এই কলোনির রঙ নিয়ন্ত্রণ করে তা বোঝার জন্য গবেষকরা জিনগত তথ্যের সাথে বন্য এবং পরিবর্তিত ব্যাকটেরিয়ার কলোনির অপটিক্যাল বৈশিষ্ট্য এবং গঠন তুলনা করেন। জিনগতভাবে ব্যাকটেরিয়ার পরিব্যক্তি ঘটিয়ে, গবেষকরা তাদের নড়াচড়া করার ক্ষমতা পরিবর্তন করে দেখেন যে তাদের কলোনির আকার বা আকৃতির পরিবর্তন ঘটছে ফলত, তাদের রঙ পরিবর্তিত হচ্ছে- তাদের কলোনি ধাতব সবুজ রঙ থেকে লাল ঘেঁষা কোনও রঙে পরিবর্তিত হচ্ছে। যদিও তারা সাদা, গোলাপী এবং বাদামীর মতো রঙ তৈরি করতে পারে না, তবে ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন কোণ অনুসারে বর্ণালী রঙ পরিবর্তন করতে পারে। আবার তারা আরও অনুজ্জ্বল রঙ তৈরি করতে পারে বা সম্পূর্ণরূপে রঙ বিহীন ও হয়ে যেতে সক্ষম। গবেষকদের মতে ফোটোনিক পিগমেন্ট হিসাবে এই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কলোনি ব্যবহার করা যেতে পারে যা বাহ্যিক উদ্দীপনায় রঙ পরিবর্তন করতে সক্ষম এবং অন্যান্য জীবন্ত কলার সাথে সংযুক্ত হতে পারে, যার ফলে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়েও নিতে পারে। তাই ভবিষ্যতে আমরা আমাদের গাড়ি এবং দেয়ালে এই ধরনের বায়োডিগ্রেডেবল পেইন্ট ব্যবহার করতে পারি।