নেচার নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে এক দল ইঁদুরের মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ ইঁদুরের সমস্ত ধরণের নড়াচড়া বন্ধ করতে পারে। ধরুন একটা শিকারী কুকুর একটি হরিণের গন্ধ পেয়েছে, দেখা যায় সেই কুকুরটা একদম স্থির হয়ে চুপ করে শিকারের পথের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। টিকটিকি যখন পোকা ধরে, তখন আমরা ঘরেই এটা দেখতে পাই। এমনকি এই ঘটনা মানুষের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায় যখন মানুষ কোনো জটিল কাজের প্রতি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে মন নিবদ্ধ করে। এই সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে যখন আমরা হঠাৎ নড়াচড়া বন্ধ করি তখন মস্তিষ্কে কী ঘটে, অর্থাৎ স্নায়ুতন্ত্র কীভাবে আমাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওলে কিহন, গবেষণার সহ-লেখক জানান, তার মিডব্রেইনে একদল স্নায়ু কোষ পেয়েছেন যা উদ্দীপিত হলে প্রাণীর সমস্ত নড়াচড়া বন্ধ করে দেয়। শুধুমাত্র হাঁটা চলা নয় সব ধরনের মোটর কার্যকলাপ স্তব্ধ হয়ে যায়, এটা ইঁদুরদের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দেয় বা খুব ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে দেয়, হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়।
এই স্নায়ু কোশগুলোর বিশেষত্ব হল যে একবার সক্রিয় হয়ে গেলে তারা শারীরিক নড়াচড়া আটকে রাখে। যেমন ভিডিও পজ করে দিন, সেখানেই থেমে যাবে, আবার প্লে টিপলে যেখানে থেমেছে, সেখান থেকেই চালু হবে। গবেষকরা যখন স্নায়ু কোষগুলোর সক্রিয়তা থামিয়ে দিয়েছেন, তখন ইঁদুরগুলো ঠিক সেখান থেকেই চলাচল শুরু করেছিল, যেখানে তারা থেমেছিল। গবেষক হাইযিয়া গনি এরা জানিয়েছেন, এই ‘পজ-এন্ড-প্লে প্যাটার্ন’ আগে দেখা স্নায়ুর কাজ থেকে ভিন্ন। অন্যান্য স্নায়ুর কাজে দেখা গেছে, শারীরিক নড়াচড়া যেখানে থেমেছিল সেখানেই তা শুরু হয় না, বরং নতুন প্যাটার্ন দিয়ে তা আবার শুরু হতে পারে।
গবেষকদের দ্বারা উদ্দীপিত স্নায়ু কোশগুলো মিডব্রেইনের মধ্যে পেডানকিউলোপন্টাইন নিউক্লিয়াস (PPN) নামে একটি এলাকায় পাওয়া যায় এবং তারা অন্যান্য স্নায়ু কোশ থেকে আলাদা যা Chx10 নামক একটি নির্দিষ্ট আণবিক মার্কার দিয়ে চিহ্নিত করা গেছে। এই পিপিএন নামে স্নায়ুকোশ মানুষ সহ সমস্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীর ক্ষেত্রে সাধারণ। তাই যদিও এই গবেষণা ইঁদুরে করা হয়েছে, গবেষকরা আশা করেন যে ঘটনাটি মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলা হয় , যে অত্যন্ত ভয় পেলে আতঙ্কে প্রাণী স্থির হয়ে যায়। কিন্তু, গবেষকদের দাবি এই স্নায়ুকোশের উদ্দীপনা আতঙ্ক থেকে নয়, তা মনোযোগ নিবদ্ধ করা থেকে সৃষ্ট।
গবেষকদের ধারণা এই নতুন গবেষণা তাদের পারকিনসন্স রোগে সাহায্য করতে পারে। কারণ মোটর অ্যারেস্ট বা ধীর গতিতে চলাচল পারকিনসন্স রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। গবেষকদের অনুমান পিপিএন-এর এই বিশেষ স্নায়ু কোশগুলো পারকিনসন্স রোগে অতিরিক্ত সক্রিয় হয়, যা মানুষের চলাফেরায় বাধা দেয়। তার জানিয়েছেন,এই গবেষণায় প্রাথমিকভাবে স্নায়ুতন্ত্রের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ কীভাবে হয় সেই মৌলিক প্রক্রিয়াগুলোর উপর মনোযোগ দিলেও পারকিনসন্স রোগের কিছু মোটর লক্ষণগুলির পিছনে কী কারণ আছে তা বুঝতেও সাহায্য হবে।