অনেকেই জানেন ব্যায়াম লিভার, ফুসফুস, স্তন এবং কিডনি সহ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। কিন্তু জিমে যাওয়া, সময় করে ব্যায়াম করা যেমন খরচ সাপেক্ষ তেমন সময় সাপেক্ষও বটে। ফলে বেশিরভাগ মানুষই আগ্রহ হারান। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য শারীরিক কার্যকলাপের সম্ভাবনা কতটা তার উপর একটা গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণা বলছে, প্রতিদিনের নানা কাজের রুটিনের মধ্যে হাঁটাহাঁটির কাজ, বাড়ির কাজ, শারীরিক পরিশ্রমের কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এতে যেমন অতিরিক্ত সময় দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, তেমন বিশেষ কোনো সরঞ্জাম দরকার পড়েনা।
২৭শে জুলাই প্রকাশিত গবেষণায় দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সম্ভাবনা অন্বেষণ করা হয়েছে। যেমন বাস বা ট্রাম স্টপে যাওয়ার জন্য খানিকটা হাঁটা, সিঁড়ি চড়া, কেনাকাটা করে ভারী ব্যাগ বওয়া, সক্রিয়ভাবে বাড়ির কাজ সারা, এমনকি দাদু দিদা, বাবা মা-রা শুনে খুশি হবেন, যখন তারা তাদের শিশুদের সাথে লাফিয়ে, দৌড়ে নানা খেলা খেলে থাকেন, তাতেও কিন্তু ব্যায়ামের ফল লাভ করেন ।
এই নতুন গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের বায়োব্যাঙ্কের ২২৩৯৮ জন অংশগ্রহণকারী নেওয়া হয়েছে যারা কখনও ক্যান্সারে আক্রান্ত হননি এবং অবসর সময়ে আলাদাভাবে কোনো ব্যায়াম করেননি। এদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ গড় ৬২ বছর বয়সী মহিলা অংশগ্রহণকারী ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের এক সপ্তাহের জন্য রিস্ট অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার পরানো হয়েছিল। এই ট্র্যাকারে সারা দিন ধরে ক্রমাগত তাদের বিস্তারিত কার্যকলাপ ধরে রাখত, যা পর্যবেক্ষণ করে,গবেষকরা দেখেছেন লোকেরা কী ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করেছেন এবং কতক্ষণ যাবত। অংশগ্রহণকারীদের এইসব কার্যকলাপ এবং অন্যান্য তথ্য পরবর্তী ৬.৭ বছরের জন্য ভবিষ্যতে ক্যান্সার হওয়া এবং অন্যান্য ক্যান্সার-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য রেকর্ডের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছিল। ক্যান্সারের সামগ্রিক ঝুঁকি অনুমান করার জন্য দৈনন্দিন নানা শারীরিক কার্যকলাপের প্রভাব দেখা হয়েছিল, তাছাড়া বয়স , ধূমপান, খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান এগুলোও দেখা হয়েছিল। এই গবেষণায় স্তন, ফুসফুস, লিভার এবং অন্ত্রের মতো শরীরের ১৩ টি ক্যান্সার সাইটের একটি গ্রুপের সাথে ব্যায়ামের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
যদিও অধ্যয়নের আওতাভুক্ত অংশগ্রহণকারীরা নিয়মিত কোনো ব্যায়াম করেন নি তবু প্রায় ৯৪ শতাংশের সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য জোরালো শারীরিক কার্যকলাপের রেকর্ড পাওয়া গেছে। দেখা গেছে প্রতিদিন ন্যূনতম প্রায় ৩.৫ মিনিট এই ধরনের কোনও কার্যকলাপ করলে তা মোট ক্যান্সারের ঝুঁকির ১৭-১৮ শতাংশ হ্রাস করে। অর্ধেক অংশগ্রহণকারী প্রতিদিন কমপক্ষে ৪.৫ মিনিট এই শারীরিক কার্যকলাপ করেন, তাদের ক্ষেত্রে মোট ক্যান্সারের ঝুঁকি ২০-২১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
স্তন, ফুসফুস এবং অন্ত্রের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ফলাফল বেশ উল্লেখযোগ্য এবং ঝুঁকি হ্রাস যথেষ্ট পরিমাণে হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন ন্যূনতম ৩.৫ মিনিট জোরালো শারীরিক কার্যকলাপ এই ক্যান্সারের ঝুঁকি ২৮-২৯ শতাংশ কমিয়ে দেয়। দিনে ৪.৫ মিনিটে, এই ঝুঁকি ৩১-৩২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের গবেষণার সীমাবদ্ধতা হল যে কীভাবে জোরালো শারীরিক কার্যকলাপ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে তার জৈবিক প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা যায়নি। পূর্ববর্তী প্রাথমিক পর্যায়ের ট্রায়ালগুলিতে দেখা গিয়েছিল যে এই ধরণের কার্যকলাপ হার্ট এবং ফুসফুসের ফিটনেসের দ্রুত উন্নতি ঘটায়। এবং উচ্চতর ফিটনেস কম ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং কম প্রদাহের সাথে যুক্ত। এগুলোর মাত্রা উচ্চ হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
ইমানুয়েল স্ট্যামাটাকিস, ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি, লাইফস্টাইল এবং পপুলেশন হেলথের অধ্যাপক, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ম্যাথিউ আহমাদি, পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় এই গবেষণাটি প্রকাশ করেছেন। গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য হল রোজ যদি নানারকম বাড়ির কাজ করেন যাতে শারীরিক কসরত লাগে, হাঁটেন , ভারী কিছু বয়ে নিয়ে যান, আপনার সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বাড়বে।