এখন আমরা সবাই জানি উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যগ্রহণ আমিষ খাবারের থেকে অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। মাইকেল ক্লার্ক, পোস্টডক্টরাল গবেষক, অক্সফোর্ড মার্টিন প্রোগ্রাম অন ফিউচার অফ ফুড, ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড এবং কেরেন প্যাপিয়ার, সিনিয়র নিউট্রিশনাল এপিডেমিওলজিস্ট, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তাদের এক গবেষণার ফলাফল নেচার ফুডে প্রকাশিত করেছেন। তারা ৫৫০০০ মানুষের খাদ্যতালিকার তথ্য নিয়েছেন, যার মধ্যে এই ব্যক্তিদের প্রত্যেকের খাদ্য ও পানীয় দুটোরই তথ্য ছিল। যারা এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন তারা ১২ মাস ধরে কী খেয়েছেন এবং পান করেছেন তা রিপোর্ট করেছেন এবং তারপরে গবেষকরা খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে তাদের ছটি ভিন্ন গ্রুপে ভাগ করেছেন: নিরামিষাশী বা ভেগান; নিরামিষভোজী কিন্তু প্রাণীজ খাদ্য যেমন দুধ, পনির খান এমন দল; মাছ খান যারা; স্বল্প মাংস খান এমন ব্যক্তি; মাঝারি পরিমাণে মাংস গ্রহণ করেন এমন ব্যক্তি; এবং উচ্চহারে যারা মাংস গ্রহণ করেন।
এরপর এই গবেষণাতে প্রাপ্ত ৫৭০০০ খাবারের খাদ্যতালিকার পরিবেশগত প্রভাবের তথ্য ডেটাসেটের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এর সাপেক্ষে পাঁচটি মূল বিষয় তারা দেখেছেন – গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন, ভূমির ব্যবহার, জলের ব্যবহার, জল দূষণ এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি৷
তারা দেখেছেন যে উচ্চ-মাংস ভক্ষণকারীদের খাদ্যের তুলনায় ভেগানদের খাদ্যের মাত্র ৩০% প্রভাব পরিবেশে পড়ে। গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে বেশি প্রাণী-ভিত্তিক খাদ্য পরিবেশে বেশি প্রভাব ফেলে। প্রতি ইউনিট গৃহীত খাদ্যে দেখা গেছে উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারের তুলনায় মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবারের তিন থেকে ১০০ গুণ পর্যন্ত প্রভাব পরিবেশে পড়ে।
কারণ মাংসের জন্য বেশি জমি ব্যবহার করতে হয়, ফলে বেশি বন কাটা হয় এবং গাছে কম কার্বন সঞ্চিত হয়। আবার প্রাণীদের খাওয়ানোর জন্য প্রচুর সার ব্যবহার করে গাছপালা চাষ করা হয়। আবার মুরদি, হাঁস, গরু, ছাগল, শূকর এবং অন্যান্য প্রাণীরা নিজেরাই কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস নির্গত করে।
উচ্চ মাংস ভক্ষণকারীদের তুলনায়, নিরামিষাশীদেরও ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে খাদ্যের প্রভাব মাত্র ২৫%, জল ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার প্রভাব ৪৬%, জল দূষণ এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে এর প্রভাব যথাক্রমে ২৭% ও ৩৪%। উচ্চ মাংসের ভক্ষণকারীদের তুলনায় কম মাংসভক্ষণকারীদের খাবারের প্রভাব পরিবেশে ৭০% ছিল, যা বেশি মাংস ভক্ষণকারীদের তুলনায় অনেকটাই কম। যারা মাংস খান, তাদের কাছে এটা সুখবর কারণ পরিবেশ সুস্থ রাখতে আপনাকে সম্পূর্ণ নিরামিষাশী বা ভেগান এমনকি পুরো নিরামিষভোজীও হতে হবে না।
এই ফলাফলগুলো খাদ্যগ্রহণের সচেতনতার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ খাদ্য ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৩০%, বিশ্বের স্বাদু জলের ৭০% এবং স্বাদু জল দূষণের ক্ষেত্রে ৭৮% দায়ী বলে অনুমান করা হয়। বিশ্বের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ভূমি মানুষ প্রাথমিকভাবে কৃষিকাজ এবং ভূমি ব্যবহারের জন্য নষ্ট করেছে। এর ফলে মানুষ গাছ কেটে বন উজাড় করেছে যা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির একটা প্রধান কারণ।
আমেরিকার ক্ষেত্রে ২০১৮-এর দশকে মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমেছে, কিন্তু পরিবেশগত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য জাতীয় খাদ্য কৌশল এবং আমেরিকা যুক্তরাজ্যের জলবায়ু পরিবর্তন কমিটি আরো ৩০-৩৫% কমানোর সুপারিশ করেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার।