সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, দূর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বব্যাপী গণবিলুপ্তির ঘটনা বা mass extinction পূর্বাভাসের চেয়েও খারাপ হবে। বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক দল স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর, মাছ এবং পোকামাকড় সহ – ৭১০০০-এরও বেশি প্রাণীর প্রজাতির জনসংখ্যার হার বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের জনসংখ্যার প্রথম রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের সংখ্যা পরিবর্তিত হওয়ার প্রবণতার তথ্য বিশ্লেষণ করে, তারা এই উপসংহারে পৌঁছেছেন, যে বর্তমানে আমরা গণবিলুপ্তিতে প্রবেশ করেছি, এবং তার হার আগের ৫ বারের চেয়ে অনেক বেশি, এই গবেষণা বায়োলজিক্যাল রিভিউ-তে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলেন যে সাধারণত বিলুপ্তি তখন বলা হয় যখন কোনো প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় তার অনেক দ্রুত বিলুপ্ত অর্থাৎ সেই প্রজাতির নতুন প্রতিস্থাপনের সংখ্যা বিলুপ্তির তুলনায় অনেক কম। বিশ্বের ৭৫% প্রজাতি যখন স্বল্প ভূতাত্ত্বিক সময়ে 2.8 মিলিয়ন বছরেরও কম সময়ে হারিয়ে যায় তখন তাকে গণবিলুপ্তি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় ।
পূর্ববর্তী গবেষণা প্রতিষ্ঠিত করেছে যে বিলুপ্তির বর্তমান হার সাধারণ বিলুপ্তির হারের চেয়ে ১০০০ – ১০০০০ গুণ বেশি। যার থেকে বিজ্ঞানীরা যুক্তি দেখাচ্ছেন পৃথিবী তার ষষ্ঠ গণ বিলুপ্তিতে প্রবেশ করেছে। কিন্তু গ্রহের পূর্ববর্তী পাঁচটি গণবিলুপ্তির ঘটনার সাথে তুলনা করলে, এটি অনন্য কারণ এই গণবিলুপ্তির মুখ্য কারিগর – মানুষ।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (IUCN) একটি প্রজাতির সংরক্ষণ মূল্যায়ন করে। IUCN- এর মুল্যায়ন অনুযায়ী ১৫০৩০০ টিরও বেশি প্রজাতির জনসংখ্যার মধ্যে ২৮% বিলুপ্তি মুখোমুখি, আর ১% প্রজাতিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
গবেষকদের বিশ্লেষণ অনুসারে, ৪৯% প্রজাতির জনসংখ্যা স্থিতিশীল, কিন্তু ৪৮% প্রজাতির জনসংখ্যা সঙ্কুচিত, যেখানে মাত্র ৩% প্রজাতির জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা আরও প্রমাণ পেয়েছেন যে IUCN-এর তালিকায় বর্তমানে ৩৩% “সর্বনিম্ন উদ্বেগ” হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা প্রজাতির প্রকৃতপক্ষে বিলুপ্তির দিকে প্রবণতা রয়েছে।
কোনো কোনো গোষ্ঠীর প্রাণীদের বিপন্নতা অন্যদের তুলনায় বেশি, যেমন উভচররা সমস্ত শ্রেণির মধ্যে সবচেয়ে বেশী হ্রাস পাচ্ছে। আবার ভৌগোলিক অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের প্রজাতির তুলনায় গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী প্রাণীরা বেশি হ্রাস পায়, সম্ভবত গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রজাতিরা পরিবর্তনের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। গবেষকরা সতঁর্ক করেছেন, জীববৈচিত্র বিপন্ন হওয়ার মুখে দাঁড়িয়েছে। এটা অস্বীকার করা যায় না যে মানুষের কার্যকলাপই এই বিলুপ্তির ঘটনার একমাত্র কারণ, যা আমাদের ভূমি, জল এবং শক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার আর তার থেকে হওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটছে। এক্ষেত্রে মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের দিক খেয়াল রাখতে হবে।