এল নিনো এবং জলবায়ু পরিবর্তন একত্রিত হয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল প্রেডিকশনের তথ্য অনুসারে ৩ জুলাই, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৭.০১০ সেলসিয়াস বা ৬২.৬২° ফারেনহাইটে পৌঁছে যায়, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগের রেকর্ড ছিল ২০১৬ র আগস্টে, ১৬.৯২° সেলসিয়াস বা ৬২.৪৬° ফারেনহাইট।
ফ্যালমাউথ, ম্যাসের উডওয়েল ক্লাইমেট রিসার্চ সেন্টারের বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানী জেনিফার ফ্রান্সিস বলেছেন, পৃথিবীর এই পরিস্থিতি আগে কখনও ছিল না। এবছর পৃথিবী তার উষ্ণতম জুন দেখেছে। যদিও বছরের এই সময়ে সাধারণত বিশ্বের গড় তাপমাত্রা শীর্ষে থাকে। তবুও গবেষকরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে মহাসাগরগুলি উদ্বেগজনকভাবে উষ্ণ হয়ে উঠেছে, মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পৃথিবীর কোন ছোটো অংশ বাদ নেই। তাছাড়া এল নিনো, যে জলবায়ুকে অস্থায়ীভাবে প্রভাবিত করে গ্রহকে উত্তপ্ত করে তা আবার ফিরে এসেছে। এল নিনোর প্রভাবে মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
ওয়াশিংটন, ডিসি-তে ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের জলবায়ু বিজ্ঞানী টমাস ডি লিবার্তো বলেছেন, তাপের বেশিরভাগই অংশ পৃথিবীর মহাসাগরের চলে যায়, ফলে আমাদের গ্রহের সমুদ্র কয়েক দশক ধরে উষ্ণ হচ্ছে। আর বর্তমানে বিশ্ব মহাসাগর অতিরিক্ত উষ্ণ হয়ে গেছে।
১৮০০ সালের তুলনায় সাম্প্রতিক দশকে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা উষ্ণতম। স্যাটেলাইটগুলোর পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া রেকর্ড অনুসারে এপ্রিল মাসে, বিশ্বের মহাসাগরগুলির পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ২১.১০ সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর বিশেষভাবে উষ্ণ হয়ে গেছে, এপ্রিল মাসে, সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বছরের এই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে । এবং মেক্সিকো উপসাগরে, ১২ জুলাই পর্যন্ত গড় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। সামুদ্রিক তাপ তরঙ্গ অর্ধেক বিশ্ব মহাসাগর জুড়ে বিরাজ করে রয়েছে।
ফোর্ট কলিন্সের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানী মেরিবেথ আর্কোডিয়া বলেছেন, উত্তপ্ত সমুদ্র একটি বিশাল সমস্যা। মহাসাগর বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়ন হওয়ার ফলে প্রায় ৯৩ শতাংশ তাপ শোষণ করে নিচ্ছে। মহাসাগর এত বেশি উষ্ণ হওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডল থেকে আর তাপ শোষণ করতে পারেনা, তাই তাপ বায়ুমণ্ডলেই আবদ্ধ থাকে আর পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। উপরন্তু সমুদ্র যে তাপ নির্গত করে, তা মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে আটকে থাকে। ফলস্বরূপ পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়েই চলেছে।