মেক্সিকোতে গুহা্র অভ্যন্তরে, গভীর অন্ধকারে বসবাস করে এক প্রজাতির অন্ধ মাছ, অ্যাস্টিয়ানাক্স মেক্সিকানাস। তিরিশটিরও বেশি গুহা মিলিয়ে তাদের বাসস্থান। তারা ওই গুহার অন্ধকারের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তাদের শরীর যে কোনো ধরনের কম্পনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল যেমন জলের স্রোতের অভিমুখ বা জলজ প্রাণীদের চলাফেরা। আর এই সংবেদনশীলতা তাদের সীমিত দৃষ্টিশক্তি বা সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তির অভাবকে পূরণ করে। কিছু কিছু মাছ আবার সম্পূর্ণরূপে তাদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। প্রায় ১ থেকে ১০০০ কোটি বছর আগে এই গুহাবাসী মাছ এদের পূর্বপুরুষ থেকে অভিযোজিত হয়ে গুহায় বসবাস করা শুরু করে। এই পূর্বপুরুষদের কিন্তু সম্পূর্ণ কার্যকারী চোখ ছিল। এই পূর্ব পুরুষের পরবর্তী প্রজাতিরা আজও মেক্সিকোর এল আলব্রা অঞ্চলে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকার কিছু অংশে সমুদ্রের ওপরের তলে বাস করে।এমনকি এদের মধ্যে আন্তঃপ্রজননও করা যেতে পারে।
পৃথিবীর বেশিরভাগ প্রাণীর শরীরিক প্রক্রিয়া একটা নির্দিষ্ট সময়ে আবর্তিত হতে থাকে, ঠিক ঘড়ির মতো, যাকে সার্কাডিয়ান রিদম বলে। এই ছন্দ, আমাদের দেহ আর আমাদের গ্রহের দিন ও রাতের সাথে সমলয়ে আনতে আলোর মাত্রা ব্যবহার করে। আমাদের শরীরের বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়া এই ছন্দের সাথে চক্রাকারে চলে এবং আমাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন খিদে পেলে আমরা খাবার খাই অথবা মেলাটোনিনের মাত্রার তারতম্যে আমাদের ঘুমের হেরফের হয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জীববিজ্ঞানী ইঙ্গা স্টেইনডাল এবং সহকর্মীরা অ্যাস্টিয়ানাক্স মেক্সিকানাস মাছেদের নিয়ে দেখার চেষ্টা করেন তারা আলো অন্ধকার চক্রের সাথে মানিয়ে নিতে পারে কিনা। গুহায় বসবাসকারী এই মাছ খুবই বিরল এবং এদের নিয়ে গবেষণা করা কঠিন কারণ এই মাছ বন্দী অবস্থায় থাকতে পারেনা। কিন্তু গবেষণাগারে রাখাকালীন এই অন্ধ মাছ আলো/অন্ধকার চক্রের সাথে মানিয়ে নেওয়ার এক অপ্রত্যাশিত ক্ষমতা দেখিয়েছে। স্টেইনডাল এবং সহকর্মীরা তিনটি আলাদা আলাদা জায়গায় অবস্থিত গুহা থেকে অন্ধ মাছের প্রজাতি এবং তাদের পূর্বপুরুষ ভ্রূণ থেকে কলার নমুনা নিয়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সেই কোশ পরীক্ষা করে দেখেন। তারা দেখেন যে আলোর সংস্পর্শে আসায় গুহায় বসবাসকারী মাছের কোশের মধ্যে বেশ কয়েকটি আণবিক ঘড়ি প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে। অন্ধ হওয়া সত্বেও মাছেদের শরীরের কোশ আলোর প্রতি সংবেদনশীল এবং আলো আঁধার চক্রের সাথে নিজেদের শরীরের ছন্দকে মানিয়ে নিতে সক্ষম।