ক্রিটেসিয়াস যুগ পৃথিবীর এক বিপজ্জনক সময়, সেই যুগের নীতিই হল, হয় তুমি অন্য প্রাণীকে খাও নয় তুমি খাদ্যে পরিণত হও। এ ছিল খাদ্য – খাদ্যকের যুগ। প্রায় ১২৫ থেকে ১০১ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগে Psittacosaurus নামে ডাইনোসর প্রজাতি বর্তমানের এশিয়া, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং থাইল্যাণ্ডের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে বাস করত। এই ডাইনোসর প্রজাতির শক্তিশালী তোতাপাখির মতো ঠোঁট ছিল, তারা পিছনের পায়ে হাঁটত, যার অগ্রভাগ নখরযুক্ত ছিল এবং এই প্রাণী দৈর্ঘ্যে প্রায় ২ মিটার বা ৬.৬ ফুট পর্যন্ত বড়ো হত।
বর্তমানে গবেষকরা এমন এক ডাইনোসরের কঙ্কাল দেখতে পেয়েছেন যা অন্য এক শিকারীর ভোজে পরিণত হয়েছিল। Psittacosaurus lujiatunensis প্রজাতির এক ডাইনোসরের কোঁকড়ানো কঙ্কাল পাওয়া গেছে, যার পাঁজরে এক শিকারী প্রাণী তীক্ষ্ণ দাঁতওয়ালা মুখ বসিয়েছে, ডাইনোসরের ঠোঁট আর চোয়াল সেই শিকারী তার নখরযুক্ত সামনের পা দিয়ে আঁকড়ে ধরে রেখেছে আর তার একটি পিছনের পা ডাইনোসরের উরুর সাথে জড়িয়ে ছিল। আশ্চর্যের বিষয় হল ডাইনোসর শিকারী এই অপসাম-সদৃশ স্তন্যপায়ী প্রাণী, সিটাকোসরাস ডাইনোসরের চেয়ে অনেক ছোটো, এর নাম Repenomamus robustus। এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটি সিটোকোসরাসের ছোটো ছোটো ছানা খেত, কিন্তু অভাবনীয় বিষয় হল এটা একটা পূর্ণাঙ্গ ডাইনোসর শিকার করছিল।
ক্রিটেসিয়াসের প্রারম্ভিক সময়ে ডাইনোসরের যুগে বসবাসকারী খুব কম স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রেপেনোমামাস অন্যতম। রেপেনোমামাস রোবোস্টাস ছিল দুটি রেপেনোমামাস প্রজাতির মধ্যে অপেক্ষাকৃত ছোটো। বৃহত্তর প্রজাতিটি একটি ব্যাজারের আকারের কাছাকাছি হতে পারে। যদিও রেপেনোমামাস সেই সময়ে বিশ্বের বৃহত্তম স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। এই ফসিল সরীসৃপের ওপর অর্থাৎ ডাইনসরের ওপর স্তন্যপায়ী প্রাণীর শাসনের এক নিদর্শন।
কানাডিয়ান মিউজিয়াম অফ নেচারের প্যালিওবায়োলজিস্ট জর্ডান ম্যালন বলেছেন, আগ্নেয়শিলার মধ্যে ফসিল অবস্থায় প্রাপ্ত মারাত্মক যুদ্ধে আবদ্ধ দুটি প্রাণী, অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, এবং ডাইনোসরের উপর স্তন্যপায়ী প্রাণীর শিকারী আচরণের এটি প্রথম নমুনা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আগ্নেয়গিরির প্রবাহ এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটিকে শিকার করে খাবারের চেষ্টার সময় ধরে ফেলেছিল।
গবেষকদের বক্তব্য রেপেনোমামাস মৃতভোজী নয়, তাছাড়া তাদের ফসিলের ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে, দুজনেই যু্যুধান এবং রেপেনোমামাস এক্ষেত্রে আক্রমণকারী, যে অপরপক্ষকে পরাস্ত করছে। এই গবেষণাটি সায়েন্টিফিক রিপোর্টস – এ প্রকাশিত হয়েছে।