সোমাটোস্ট্যাটিন অথবা গ্রোথ হরমোন-ইনহিবিটিং হরমোন (GHIH) আমাদের পাচনতন্ত্রের বিভিন্ন জায়গায় ডেল্টা কোশ থেকে নি:সৃত হয়। এটি এক ধরনের পেপটাইড হরমোন যা এন্ডোক্রাইন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোন নিউরোট্রান্সমিশন এবং কোশের বিস্তারকে প্রভাবিত করে এবং নিঃসরণে বাধার সৃষ্টি করে। আমাদের শরীরের সোমাটোস্ট্যাটিনের অনেক ভূমিকাই রয়েছে। পূর্ববর্তী গবেষণায় মনে করা হয়েছিল এই হরমোন নেপ্রিলাইসিন এনজাইম তৈরি করতে সাহায্য করে, যা অ্যামাইলয়েড বিটা প্রোটিনকে ক্ষয় করে। অ্যামাইলয়েড বিটা প্রোটিন একত্রিত হয়ে আবার অ্যালজাইমার আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে নিউরনের ক্ষতি করে।
নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সোমাটোস্ট্যাটিন আসলে অ্যামাইলয়েড-বিটার উপর আরও সরাসরি প্রভাব ফেলে। প্রোটিনের মনোমার (একক অণু) জুড়ে অলিগোমার (মাল্টি-মলিকিউল) আকারে পরিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়াতে বাধা সৃষ্টি করে। কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক স্নায়ুবিজ্ঞানী জেরল্ড স্মিট-উলমস বলেছেন সোমাটোস্ট্যাটিন অ্যামাইলয়েড বিটা প্রোটিনের একত্রিত হওয়াকে রোধ করে না বরং গতি ধীর করে দেয়৷ আর এই গতি মন্থর হওয়াটাও হয়তো চিকিৎসার জন্য জরুরি।
স্মিট-উলমস অন্যান্য গবেষকদের সঙ্গে মিলে ইদুঁরের উপর সোমাটোস্ট্যাটিনের ঘাটতি এবং অ্যামাইলয়েড-বিটা প্লেক একত্রিতকরণের প্রভাব পরীক্ষা করে দেখেছেন। তারা দেখেন, যে প্রাণীদের মধ্যে নির্দিষ্ট হরমোন না থাকায় আরও বেশি অলিগোমার তৈরির প্রবণতা রয়েছে। ফলত তাদের মনে হয়েছে যে নেপ্রিলাইসিনের ক্রিয়াকলাপের ওপর সোমাটোস্ট্যাটিনের কোনো প্রভাব হয়তো নেই। যদিও এটা পরিষ্কার যে সোমাটোস্ট্যাটিনের সাথে অ্যালজাইমার রোগের কোনো না কোনো সংযোগ রয়েছে।
গবেষকদের মতে কীভাবে ক্ষুদ্রতম স্কেলে এই রাসায়নিক বন্ধন ঘটে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। তাহলেই বোঝা যাবে কীভাবে অ্যামাইলয়েড-বিটা একত্রিত হয় এবং কীভাবে তা রোধ করা যেতে পারে। মানবদেহে সোমাটোস্ট্যাটিনের ভারসাম্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই একে চিকিত্সায় ব্যবহার করা সহজ হবে না, তবে এটা অ্যালজাইমারের নিরাময়ের জন্য গবেষকদের নতুন দিশা দেখাবে।