অ্যারিস্টটলের সময় থেকে, নীরবতাও কি শোনা যায় তা নিয়ে বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকরা বিতর্ক করে গেছেন। ১০-ই জুলাই PNAS পত্রিকায় প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এ বিষয়ে কিছু নতুন পরীক্ষা এই সম্বন্ধে আলোকপাত করেছে।
গবেষণাতে ‘এক-ই-অধিক বিভ্রম’ নামে সুপরিচিত একটা প্রকৌশলের ব্যবহার করেছেন। এই পরীক্ষায় একটা বস্তুকে ছোটো ছোটো বস্তু যা যোগ করলে সম আকার হবে তার তুলনায় বড়ো বলে মনে হয়। শব্দ নিয়ে এরকম পরীক্ষায় দেখা গেছে, এটা শ্রোতাদের মস্তিষ্ককে বোকা বানিয়ে তাদের ভাবায় যে দুটো পৃথক শব্দ একটি একক শব্দের চেয়ে ছোটো, যেখানে বাস্তবে দুক্ষেত্রেই শব্দের জন্য মোট সময় একই লেগেছে।
মজার বিষয় হল, শব্দের বদলে যখন তারা silence বা নীরবতা নিয়ে কাজ করেছেন, তখনও মানুষের মনে বিভ্রম একইভাবে কাজ করেছে। আপনি নিজেই এটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, একটা একক অবিচ্ছিন্ন নীরবতা দুটি পৃথক নীরবতার চেয়ে দীর্ঘ বলে মনে হয়, যদিও দুটো ক্ষেত্রেই সামগ্রিকভাবে সময়কাল অভিন্ন।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শন ও মনোবিজ্ঞানের স্নাতক ছাত্র রুই ঝে গোহ বলেছেন, নীরবতা, মোটেও শব্দ নয় – এটা শব্দের অনুপস্থিতি। তিনি জানিয়েছেন আশ্চর্যজনকভাবে, তাদের কাজে বোঝা গেছে যে কিছুই শুনতে না পাওয়াও এক ধরনের শ্রুতি। তারা জানিয়েছেন ব্যক্তিদের শব্দ শুনে যেরকম প্রতিক্রিয়া, নীরবতাতেও তাদের একই প্রতিক্রিয়া ছিল, যেন তারা কিছু শুনছিলেন।
সাতটা পরীক্ষায় মোট ১০০০ জন অংশগ্রহণ করেছিলেন। ‘এক-ই-অধিক বিভ্রম’ এই পরীক্ষা ছাড়াও আংশিক নীরবতা এবং পূর্ণ নীরবতা নিয়ে অন্যান্য অনুরূপ পরীক্ষা করা হয়েছিল। ব্যস্ত রেস্তোরাঁ এবং ট্রেন স্টেশনের পটভূমিতে যে আওয়াজ পাওয়া যাওয়া তা যেমন পরীক্ষায় আনা হয়েছিল তেমন সুরের বৈচিত্র্যও পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ব্যক্তিদের একটা টানা শব্দ শোনানো হয়েছিল, তারপর একটা শব্দ মাঝে নীরবতা ও আবার সেই শব্দ শোনানো হয়েছিল। তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল, টানা শব্দ বেশি সময়ব্যাপী ছিল, কিন্তু বাস্তবে দুটো ক্ষেত্রেই শব্দের সময়কাল এক ছিল। উল্টোদিকে নীরবতা- ও শব্দের মধ্যে একইভাবে প্রক্রিয়া করা হয়েছিল। তাদের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়েছিল, টানা নীরবতা ও দুটো শব্দের মাঝে নীরবতা কোনটা বেশি স্থায়ী, তারা বলেছিলেন টানা নীরবতা, কিন্তু এখানে সময়কাল একই ছিল। এই গবেষণা আমাদের শ্রবণশক্তি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা দেয়।
পরবর্তী ক্ষেত্রে গবেষকরা শব্দ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নীরবতা নিয়ে কাজ করতে চান। হয়তো এই গবেষণা ভবিষ্যতে শ্রবণ শক্তির সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।