ঋতু মানুষের প্রজননকে প্রভাবিত করে বলে মনে করছেন গবেষকরা। অস্ট্রেলিয়ায় এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রীষ্মকালে যদি ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয় তবে সেই ডিম্বাণু দিয়ে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) সবচেয়ে সফল হয়। গবেষকদের কাছে আজ মূলত গুরুত্বপূর্ণ কখন ডিম্বাণুটি সংগ্রহ করা হয়েছে, হিমায়িত ভ্রূণটি কখন এক ব্যক্তির গর্ভে স্থানান্তরিত করা হয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গ্রীষ্মে ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হলে, বাচ্চা জন্মের হার ৩১ শতাংশ; যদি শরৎকালে তা সংগ্রহ করা হয়, তবে জন্মের হার ২৬ শতাংশ, অন্যদিকে শীতকালে সংগ্রহীত ডিম্বাণুর জন্মের হার ২৬ থেকে ৩১ শতাংশের মধ্যে।
যদিও পূর্ববর্তী IVF গবেষণায় দেখা গেছে যে ভ্রূণ স্থানান্তর, ইমপ্লান্টেশন, গর্ভাবস্থা বা জন্মহারের উপর ঋতুর কোনো ধারাবাহিক প্রভাব নেই, কিন্তু মনে করা হচ্ছে যে ডিম্বাণু সংগ্রহ একটি ভিন্ন বিষয়। কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ সেবাস্টিয়ান লেদারসিচ বলেছেন আইভিএফ-এ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাজা ভ্রূণ স্থানান্তরের দিকে নজর দেওয়া হয়ে থাকে। ফলত পরিবেশগত কারণগুলোর সম্ভাব্য প্রভাবকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই ঋতু এবং সূর্যালোকের প্রভাব ডিম্বাণুর বিকাশ, ভ্রূণ প্রতিস্থাপন এবং গর্ভাবস্থার প্রাথমিক বিকাশের উপর পড়তে পারে।
গবেষকরা অস্ট্রেলিয়ার পার্থের একটি ফার্টিলিটি ক্লিনিক থেকে আট বছরের মোট ৩৬৫৭টি হিমায়িত ভ্রূণ স্থানান্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এই সমস্ত ভ্রূণের মধ্যে, ১০ ঘন্টারও বেশি সূর্যালোকের দিনে সংগ্রহ করা ভ্রূণের জন্মের হার ৭ ঘন্টারও কম সূর্যালোকের দিনের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। যদিও দিনের প্রকৃত তাপমাত্রা এর উপর কোনো প্রভাব ফেলে না বলে মনে করা হয়েছে। ২০২২ সালে উত্তর গোলার্ধে একটি অনুরূপ গবেষণায় দেখা গেছে যে ডিম্বাণু সংগ্রহের সময় ঋতু এবং তাপমাত্রা পরবর্তী ক্ষেত্রে জন্মের হারকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষত, বোস্টনে গ্রীষ্মকালে সংগৃহীত ডিম্বাণুর জন্মের হার শীতকালে সংগ্রহ করা ডিম্বাণুর তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি। এর থেকে বোঝা যায় যে একজন ব্যক্তির ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতার উপর ঋতুর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে। এক্ষেত্রে সূর্যালোকের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে, যেখান থেকে ভিটামিন ডি বা মেলাটোনিন তৈরি হয়।