অ্যালজাইমার্সের সম্ভাব্য চিকিত্সা জন্য বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন প্রয়োগের ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন । বিগত কয়েক দশক ধরে অ্যালজাইমার্স সংক্রান্ত গবেষণা সত্ত্বেও, বিজ্ঞানীরা এমন কোনও চিকিত্সা পদ্ধতি এখনো খুঁজে পাননি যার দ্বারা রোগটি নির্মূল করা যায় বা এর গতি হ্রাস করা যায়। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখছেন এক সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতিতে, অ্যালজাইমার্স ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে-এই রোগের গতিপথ পরিবর্তন করা যায় কিনা।কিন্তু কেন এই প্রচেষ্টা?
আগের বেশিরভাগ গবেষণায় বিটা-অ্যামাইলয়েড প্লেক নামে এক প্রোটিনের গুচ্ছের কথা বলা হয়েছে যা অ্যালজাইমার্স রোগীদের মস্তিষ্কের সামনে এবং কেন্দ্রে জমা হয়। তবে দেখা গেছে যে শুধুমাত্র ওষুধের ব্যবহারে বিটা-অ্যামাইলয়েড প্লেক নির্মূল করা যায় না বা এই রোগে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না। তাই বেশ কিছু গবেষক প্রস্তাব দিয়েছেন যে এই প্রোটিনের গুচ্ছ অ্যালজাইমার্সের কারণ না হয়ে বরং পরিণতি বলা যেতে পারে।
গবেষকদের মতে, হয়তো কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণের জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিঘ্নিত হয় এবং ইমিউন প্রতিক্রিয়ার ফলে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হয় ও বিটা-অ্যামাইলয়েড অতিরিক্ত পরিমাণে উত্পাদন হয়। তাছাড়াও শরীরের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের স্থায়ী ইমিউন কোশ, মাইক্রোগ্লিয়া, যারা সাধারণত এই প্রোটিনগুলো শরীরে কোনো ক্ষতি করার আগেই সরিয়ে দিত, তাদের সক্রিয়তাও কমিয়ে দেয়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রদাহজনক সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং বিটা-অ্যামাইলয়েড প্রোটিনের উত্পাদনকে বাড়িয়ে তোলে। এই বিটা-অ্যামাইলয়েড প্রোটিনের জীবাণুরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার মাধ্যমে এরা ক্ষতিকারক আক্রমণকারীদের নষ্ট করে। কিন্তু এই বিটা-অ্যামাইলয়েড প্রোটিন মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কোশগুলোকে জীবাণুর সাথে গুলিয়ে ফেলে এবং একত্রিত হয়ে প্রোটিন প্লাক তৈরি করে যা মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। অন্যদিকে, অ্যালজাইমার্স রোগীর ক্ষেত্রে মাইক্রোগ্লিয়া তার সক্রিয়তা হারায়। এই ভ্যাকসিন মাইক্রোগ্লিয়া কোশগুলোকে সক্রিয় করে তোলে যাতে তারা জমে থাকা বিটা-অ্যামাইলয়েড প্রোটিনকে সরিয়ে ফেলে এবং এই ঘটনার জন্য দায়ী ইমিউন ক্যাসকেড বা প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়। ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে গেলে সেটি শুধুমাত্র অ্যালজাইমার্স প্রতিরোধ করবে তা নয় রোগের চিকিত্সার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। তত্ত্বটি এই ধারণাকে আরও প্রতিষ্ঠিত করে যে- যে সমস্ত ব্যাক্তিরা হার্পিস ভাইরাস এবং SARS-CoV-2 সহ নির্দিষ্ট কিছু ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত তাদের পরবর্তী ক্ষেত্রে অ্যালজাইমার্স রোগের ঝুঁকি রয়েছে।