মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মৃত্যুপথযাত্রী দুজন ব্যক্তির মস্তিষ্কে এমন কিছু ক্রিয়াকলাপ সনাক্ত করতে পেরেছেন, যে ক্রিয়াকলাপ আগে সদ্য হৃদপিণ্ড স্তব্ধ হওয়া পশুদের মধ্যেও বিজ্ঞানীরা দেখেছিলেন। মানুষের মৃত্যুর সময় মস্তিষ্কে ঠিক কী ঘটে, তা সম্পর্কে কোনো রকম স্পষ্ট ধারনা এখনও অবধি নেই।
গতবছর বিজ্ঞানীরা একজন মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির মস্তিকের তরঙ্গ মেপেছেন, মৃত্যুর মুহূর্তে মস্তিষ্কে গামা তরঙ্গের মাত্রা অন্য তরঙ্গের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। এই নতুন গবেষণায় ভেন্টিলেটারে লাইফ সাপোর্টে থাকা দুজন ব্যক্তির মস্তিষ্কে গামা তরঙ্গের একইরকম বিস্ফোরণ দেখা গেছে, যখন তাদের থেকে এই লাইফ সাপোর্টের সহায়তা সরিয়ে দেওয়া হয় এবং মৃত্যু হয়।
২০১৩ সাল থেকে, নিউরোলজিস্ট জিমো বোর্জিগিন এবং তার সহকর্মীরা ইঁদুরের হৃদযন্ত্র বিকল করে তাদের মস্তিষ্কে যা দেখা গেছে, তার সাথে মৃত্যুর সময়ে মানুষের মস্তিষ্কে কী ঘটে তা জানার চেষ্টা করছেন। তাদের যুক্তি হল প্রাণীর জাগ্রত অবস্থার তুলনায় মস্তিষ্কে হঠাৎ তরঙ্গ বৃদ্ধি পাওয়া এক ধরনের জৈবিক ঝলক, হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা কিছু ব্যক্তি এই বিষয়ে নিজেরাও একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
কোমাতে থাকে চারজন ব্যক্তির মধ্যে মৃত্যুর পরে দুজন ব্যক্তির মস্তিষ্কে ডাক্তাররা ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফিক -এর (EEG) মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। যে গামা তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল, তা মস্তিষ্কের দুই অর্ধের মধ্যেই দীর্ঘকালীন যোগাযোগ রক্ষা করছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা এই সময়ে যেন মৃত ব্যক্তি উজ্জ্বল আলো বা পরিচিত মুখ দেখতে পাচ্ছিলেন। মস্তিষ্কের পিছনের কর্টিকাল অংশ, যেখানে দর্শন সংক্রান্ত তথ্য প্রক্রিয়াজাত হয়, মৃত্যুর কিছুক্ষণ পরেও তা সক্রিয় ছিল। গামাতরঙ্গ মস্তিষ্কের যেখানে সৃষ্টি হয়, তা মানুষের স্বপ্ন দেখার সঙ্গে জড়িত অঞ্চল। তাদের বক্তব্য হল হার্ট অ্যাটাকের পর মস্তিষ্কের মধ্যে কী ঘটে তা নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।