আর্গোল্যান্ড মহাদেশ, ১১৫ মিলিয়ন বছর আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে বিভক্ত হওয়ার পরে আপাতদৃষ্টিতে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল, নতুন একটি গবেষণা অনুসারে তা আবার আবিষ্কৃত হয়েছে। মহাদেশীয় বিভাজন সাধারণত প্রাচীন জীবাশ্ম, শিলা এবং পর্বতশ্রেণীতে চিহ্ন রেখে যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আর্গোল্যান্ড কোথায় গিয়েছিল তা খুঁজে বের করতে পারেনি। এখন নেদারল্যান্ডসের ইউট্রেচ্ট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা মনে করেন যে তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পূর্ব দ্বীপের নিচে লুকানো রহস্যময় এই ল্যান্ডমাসটি উন্মোচন করেছেন। আবিষ্কারটি ওয়ালেস লাইন নামে পরিচিত একটি কাল্পনিক সীমানা যা দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এবং অস্ট্রেলিয়ান প্রাণীজগতকে পৃথক করে, তা ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আশেপাশে “রিবন মহাদেশ” এর বিট খুঁজে পেয়েছিলেন, কিন্তু তাদের একত্রিত করতে পারেননি। তাদের মতে আর্গোল্যান্ড অনেকগুলি অংশে বিভক্ত। এটি ইন্দোনেশিয়ার পূর্বে দ্বীপগুলির নীচে একটি “খুব বর্ধিত এবং খণ্ডিত অংশ” হিসাবে টিকে ছিল৷ এই কাজের মাধ্যমে, তারা দেখেছেন আর্গোল্যান্ড সবুজ, সমুদ্রের নীচে প্রবাহিত, এটি একটি কঠিন ভর নয়, বরং সমুদ্রের তল দ্বারা বিভক্ত মাইক্রোমহাদেশের একটি সিরিজ। অ্যাডভোকাট এবং তার ইউট্রেচ্ট ইউনিভার্সিটির সহকর্মী ভূতাত্ত্বিক ডাউয়ে ভ্যান হিন্সবার্গেন আর্গোল্যান্ডকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য একটি নতুন শব্দ তৈরি করেছেন, ‘”আর্গোপেলগো।” তাদের ফলাফল ১৯ শে অক্টোবর পিয়ার-পর্যালোচিত জার্নাল গন্ডোয়ানা রিসার্চে প্রকাশিত হয়েছিল।
গবেষণাটি কেবল আমাদের বলে না যে কীভাবে আমাদের গ্রহ আজকের মতো দেখতে হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এটি বিজ্ঞানীদের তাত্ত্বিক ওয়ালেস লাইনকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে। এটি একটি অদৃশ্য বাধা যা ইন্দোনেশিয়ার মাঝখান দিয়ে চলে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দ্বীপপুঞ্জে স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং এমনকি প্রাথমিক মানব প্রজাতিকেও আলাদা করে। এই বাধাটি বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করেছে কারণ এটি দ্বীপের বন্যপ্রাণীকে স্পষ্টভাবে আলাদা করে। লাইনের পশ্চিমে বানর, বাঘ এবং হাতির মতো প্লাসেন্টাল স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে পাওয়া যায়। তবে এগুলি পূর্বে প্রায় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত, যেখানে মার্সুপিয়াল অর্থাৎ ক্যাঙ্গারুর মতো প্রাণী এবং কাকাতুয়ার মতো পাখি দেখা যায়, যা সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার সাথে সম্পর্কিত প্রাণী। আর্গোল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া থেকে তার নিজস্ব বন্যপ্রাণী নিয়ে সরে যাওয়ার সময়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গে পড়তে পারে। গবেষকদের মতে এই পুনর্গঠনগুলি জীববৈচিত্র্য এবং জলবায়ুর বিবর্তনের মতো প্রক্রিয়াগুলি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।