সাধারণ গৃহস্থালির কার্যে ব্যবহৃত জীবাণুনাশক, আঠা এবং আসবাবপত্রের কাপড়ে পাওয়া কিছু রাসায়নিক, মস্তিষ্কের সহায়ক কোশের বিকাশের জটিল পর্যায়ে ক্ষতি করতে পারে, এমন কথাই জানাচ্ছে পরীক্ষাগারে মানব কোশ এবং ইঁদুরের উপরে করা একটি নতুন গবেষণা। পরিবেশে পাওয়া ১৮২৩টি অজানা, বিষাক্ত যৌগ দিয়ে শুরু করে, ওহিওর কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির আণবিক জীববিজ্ঞানী ইরিন কোহন এবং সহকর্মীরা দুটি শ্রেণির রাসায়নিক শনাক্ত করেছেন যা পরীক্ষাগারে অলিগোডেনড্রোসাইট নামক কোশের বিকাশকে রোধ করে বা নষ্ট করে দেয়। অলিগোডেনড্রোসাইট হল এক ধরনের স্নায়ুর সহায়ক কোশ যা স্নায়ুর চারপাশে আবৃত করে একটি অন্তরক আবরণ তৈরি করে যা মস্তিষ্কের সংকেতকে গতির সাথে চলতে সহায়তা করে।
চিহ্নিত দুটি রাসায়নিক শ্রেণির মধ্যে একটি শ্রেণি হল কোয়াটারনারি যৌগ যা জীবাণুনাশক স্প্রে, ওয়াইপস এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস মেরে ফেলার জন্য টুথপেস্ট এবং মাউথওয়াশের মতো পণ্যে ব্যবহৃত হয় এবং কখনও ঠিকভাবে ব্যবহার না করা হলে তা মুখ বা শ্বাসের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। অন্য শ্রেণির যৌগ হল অর্গানোফসফেটস। আগুনের শিখা প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহৃত এই উপাদান সাধারণত টেক্সটাইল, আঠা এবং গৃহস্থালির জিনিসপত্র যেমন আসবাবপত্র এবং ইলেকট্রনিক্স পণ্যে পাওয়া যায় এবং আমরা সাধারণত যে ঘরে সময় কাটাই তার বাতাসে থাকতে পারে। এই শ্রেণির যৌগ, ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে শেষে মস্তিষ্কে চলে যেতে পারে। জন্মের পাঁচ দিন পর থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে একটি নির্দিষ্ট কোয়াটারনারি যৌগ, সেটিলপাইরিডিনিয়াম ক্লোরাইডের প্রভাবে ইঁদুরের মস্তিষ্কে অলিগোডেনড্রোসাইটের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল। অনুরূপ প্রভাব একটি পেট্রিডিশে বেড়ে ওঠা মানব স্টেম সেলের ক্লাস্টার যা মস্তিষ্কের কলার মতো আচরণ করে এবং ব্রেন অর্গানয়েড নামে পরিচিত সেখানেও দেখা গেছে। বর্তমানের অধ্যয়নগুলোতে দেখা গেছে মহামারী চলাকালীন মানুষের রক্তে কোয়াটারনারি যৌগের মাত্রা সম্ভবত জীবাণুনাশকের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে আগের তুলনায় দ্বিগুণ ছিল। অর্গানোফসফেট রাসায়নিকের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি দেখা গেছে কারণ, পরিবেশে এবং মানুষের রক্ত, প্রস্রাব, প্ল্যানসেন্টাল টিস্যু এবং মায়ের দুধে এই যৌগটি ব্যাপকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। গবেষকদের মতে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র পরিবেশগত বিভিন্ন কারণের জন্য বিশেষভাবে সংবেদনশীল, এবং রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকারক হতে পারে যদি তা বিকাশের সময়কালে ঘটে থাকে।