মাইক্রোপ্লাস্টিক হল প্লাস্টিকের ছোটো ছোটো টুকরো যা চওড়ায় প্রায় ৫ মিলিমিটারেরও কম। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক মুখ, নাক বা শরীরের বিভিন্ন ছিদ্র যার সঙ্গে বাইরের পৃথিবীর সংযোগ রয়েছে তার মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। আমরা জানি যে বেশিরভাগ অঙ্গ এবং কলা মানব দেহের অভ্যন্তরে সম্পূর্ণরূপে আবদ্ধ থাকে তবুও কীভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব আভ্যন্তরীণ অঙ্গে পড়ছে সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে তথ্যের অভাব রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ACS-এর এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কিছু গবেষক- কুন হুয়া, জিউবিন ইয়াং এবং সহকর্মীরা অনুসন্ধান করে দেখেন প্লাস্টিক কণা পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে মানব দেহের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে প্রভাবিত করছে কিনা। গবেষকরা এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান করতে গিয়ে দেখেছেন যে খাদ্য, জল, বায়ু ছাড়াও মানবদেহের কিছু অংশে মাইক্রোপ্লাস্টিক দেখা গেছে। যদিও আমাদের আভ্যন্তরীণ অঙ্গ যা সরাসরি পরিবেশের সংস্পর্শে আসে না তা নিয়ে পরীক্ষা এখনও সীমিত, তবে এই পাইলট গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা হার্ট সার্জারি করেছেন তাদের হৃদপিণ্ডের কলাতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে।
একটি পরীক্ষায়, গবেষকরা কার্ডিয়াক সার্জারির সময় ১৫ জনের হার্টের টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। সেইসঙ্গে ৭-৮ জন রোগীদর থেকে অপারেশনের আগে এবং পরে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। গবেষকরা লেজার ডাইরেক্ট ইনফ্রারেড ইমেজিংয়ের সাহায্যে হার্টের টিস্যুর নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেন পলিথিন টেরেফথালেট, পলিভিনাইল ক্লোরাইড এবং পলি মিথাইল মেথাক্রিলেট সহ আট ধরনের প্লাস্টিকের ২০ থেকে ৫০০ মাইক্রোমিটার-প্রশস্ত কণা টিস্যুতে উপস্থিত রয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষকরা বেশিরভাগ কলার নমুনায় দশ-বিশ থেকে হাজার হাজার পৃথক মাইক্রোপ্লাস্টিক টুকরা সনাক্ত করেছেন, যদিও কলার নমুনায় প্লাস্টিকের পরিমাণ বা উপাদানে ভিন্নতা রয়েছে। সমস্ত রক্তের নমুনাতেও প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে, কিন্তু হার্টের অস্ত্রোপচারের পরে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার গড় আকার হ্রাস পায় এবং আরও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক কণা রক্তে পাওয়া যায়। যদিও অল্প সংখ্যক ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছিল, গবেষকদের মতে তারা প্রাথমিক প্রমাণ পেশ করতে সক্ষম হয়েছেন যে হৃদপিণ্ড এবং তার অভ্যন্তরীণ টিস্যুতে বিভিন্ন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা স্থায়ীভাবে জমা হতে পারে।