খরগোশ, কাঠবেড়ালী বা ইঁদুর মত স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তাদের আশপাশের জগতটাকে অনুভব করে তাদের গোঁফ বা হুইস্কারস দিয়ে। কিন্তু ইঁদুর চারপাশের বায়ু চলাচল অনুধাবন করতে তাদের চোখের উপরে বিশেষ, অ্যান্টেনার মতো গোঁফ ব্যবহার করে। এই লম্বা, সরু চুলের মতো গোঁফ ইঁদুরদের অন্ধকার পরিবেশে শিকারী বা শিকারের গতিবিধি সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী অ্যান ক্লেমেন্স বলেছেন যে বেশিরভাগ গবেষণায় ইঁদুরের নাকের তলার গোঁফকে কেন্দ্র করে হয়েছে কিন্তু তার বাইরেও মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে এই ধরনের হুইস্কারস রয়েছে। উডস হোলের মেরিন বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে একটি গবেষণা কোর্সে একসাথে কাজ করার সময়, ক্লেমেন্স এবং তার সহকর্মীরা লক্ষ্য করেছিলেন যে ইঁদুরের চোখের উপরের কিছু লম্বা এবং সূক্ষ্ম হুইস্কারস রয়েছে যা সুপরাঅরবিটাল হুইস্কার নামে পরিচিত। গবেষকদের অনুমান এই হুইস্কারস ইঁদুরকে আশপাশের বায়ুর গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করে। লেলোয়ার ইনস্টিটিউটের স্নায়ুবিজ্ঞানী মাতিয়াস মুগনাইনি্র মতে বাতাস গন্ধ, আর্দ্রতা এবং বায়ুপ্রবাহের দিক সম্পর্কে তথ্য দেয় , কিন্তু স্নায়ুবিজ্ঞানে এই বিষয় সম্পর্কে অধ্যয়ন করা হয়নি।
মুগনাইনি, ক্লেমেন্স এবং তাদের সহকর্মীরা বাতাসের বিভিন্ন গতিতে ইঁদুরের মাথার সমস্ত হুইস্কারস কীভাবে আচরণ করে তা তুলনা করেছেন। তারা দেখেন সুপরাঅরবিটাল হুইস্কারস অন্যান্য হুইস্কারের তুলনায় হালকা বাতাসেও খুব জোরে নড়াচড়া করে।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এক্স-রে দ্বারা তারা দেখেন যেখানে একটি সুপরাঅরবিটাল হুইস্কর ফলিকল একটি স্নায়ুর সাথে মিলিত হয়, সেখানে স্নায়ু কোশের প্রোজেকশান বৃত্তাকারে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। তাই এই হুইস্করস বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু চলাচলের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে ইঁদুরের মুখের গোঁফ ছেঁটে দেওয়া হলে তাদের বাতাস চলাচল বোঝার ক্ষমতা হ্রাস পায়। নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশেষ করে চোখের ওপরের হুইস্করস বায়ুর প্রতি সংবেদনশীল তাই সম্পূর্ণ অন্ধকারেও, যেদিকে বাতাস বয় ইঁদুরগুলো সেদিকে নিয়মিতভাবে ঘুরে যায়। কিন্তু যখন গবেষকরা লিডোকেইন দিয়ে সুপরাঅরবিটাল হুইস্কারগুলোকে অসাড় করে দেয়, তখন ইঁদুর এই প্রতিক্রিয় দেখায়নি।