থোয়াইটস গ্লেসিয়ার হল এক দীর্ঘ বিস্তৃত এবং বিস্তীর্ণ অ্যান্টার্কটিক হিমবাহ যা মাউন্ট মারফির পূর্বে, মেরি বার্ড ল্যান্ডের ওয়ালগ্রিন উপকূলে অবস্থিত। ১৯৮০ সাল থেকে এই হিমবাহের দিকে নজরদারি রাখা চলছে, কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে এর গলে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। যদি থোয়াইটস হিমবাহ যাকে ‘ডুমসডে হিমবাহ’ নামে ডাকা চলছে, তা ধসে পড়ে তবে কী ঘটতে পারে? এখন এই বিশাল অ্যান্টার্কটিক বরফের পাত উষ্ণ সমুদ্রের জলে ধীরে ধীরে গলছে। কিন্তু যদি থোয়াইটস ধসে পড়ে, জলস্তর আরও বাড়বে, আর একের পর এক হিমবাহ সমুদ্রের জলের ধাক্কায় গলে যেতে থাকবে, আর এই গলনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও ১০ ফুট বেড়ে যেতে পারে। যদি সমুদ্রপৃষ্ঠ আর মাত্র দুফুট উঁচু হয়, তাহলেই সমুদ্রপাড়ের দেশ, শহর, গ্রাম জলের তলায় চলে যাবে। নিউইয়র্ক, মিয়ামি র মতো শহর মারাত্মক বন্যায় ভাসতে থাকবে। বিশ্বব্যাপী সাড়ে ৯কোটি মানুষের বাসভূমি, রোজগার, জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ দশ ফুট উঁচু হলে তার ভয়ঙ্কর প্রভাবে মানুষের সভ্যতা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। থোয়াইটস হিমবাহ এখনই সমুদ্রপৃষ্ঠ ফুলে ওঠায় ৪ শতাংশ অবদান রেখে ফেলেছে। ২০০০ সাল থেকে এখনও অবধি এর থেকে ১০০০ বিলিয়ন টন বরফ গলে জল হয়ে গেছে।
এই কারণেই ভূ-প্রকৌশলীরা নানা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করার চেষ্টা করছেন যা হিমবাহ গলার গতি কমিয়ে দিতে পারে। জন মুর, ল্যাপল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন হিমবিজ্ঞানী এবং জিওইঞ্জিনিয়ারিং গবেষক, বিশাল ৬২-মাইল-দৈর্ঘ্যের ডুবো পর্দা স্থাপন করতে চান, যা উষ্ণ সমুদ্রের জল হিমবাহে পৌঁছোতে এবং গলতে বাধা দেবে। মুর ব্যাখ্যা করেছেন, পর্দা সমুদ্রের উষ্ণ স্রোতকে আটকাতে কার্যকর হবে আর, প্রয়োজনে অপসারণ করা সম্ভব। যদি পর্দার জন্য স্থানীয় পরিবেশ অপ্রত্যাশিত ঝুঁকির মুখোমুখি হয় তবে পর্দা সরিয়ে নিয়ে আবার নতুন করে ডিজাইন করা যেতে পারে। তবে এই প্রযুক্তির বাস্তবায়ন কয়েক দশক দূরে, গবেষকরা ছোটো স্কেলে প্রোটোটাইপ পরীক্ষা করছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুরের সহকর্মী এ নিয়ে কাজ করছেন, আগামী ২০২৫ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে তারা পরবর্তী ধাপে পৌঁছোবেন। এখন ৩ ফুট লম্বা পর্দা বানিয়ে তারা ট্যাঙ্কের নীচে লাগিয়ে দেখছেন, পরীক্ষা সফল হলে তারা ক্যাম নদীর নীচে এটা লাগাবেন, বা নৌকোর পেছনে লাগিয়ে এটা ঠেলবেন। অর্থাৎ ধীরে ধীরে তারা প্রগতির উন্নতি করতে থাকবেন, যতক্ষণ না অ্যার্ন্টাকটিকাতে ব্যবহারযোগ্য হচ্ছে। আগামী দুবছরের মধ্যে তাদের নরওয়েজান ফিয়র্ড-এ ৩৩ ফুট দৈর্ঘ্যের পর্দা নিয়ে পরীক্ষা করার ইচ্ছা আছে। পরীক্ষা করার স্তর অবধি খরচ ১০ মিলিয়ন ডলার পড়বে, কিন্তু পর্দার ব্যবস্থা করতে ৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ পড়বে, যা ভারতীয় মুদ্রায় চারহাজার একশো তেতাল্লিশ কোটি বাইশ লাখ পঁচিশ হাজার টাকা। বিরাট খরচ! সন্দেহ নেই, কিন্তু মুর জানিয়েছেন আমেরিকাতে প্রতি বছর সমুদ্রের উচ্চতা ১ মিটার বাড়ার জন্য প্রতিরক্ষা খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার বাজেট করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বে বেশিরভাগ দেশে এর ধারে কাছ টাকা নেই। কিন্তু একবার টিপিং পয়েন্টে পৌঁছে গেলে অর্থাৎ হিমবাহ ভাঙা শুরু হলে কার্বন খরচ কম করেও আমরা সমুদ্রস্ফীতি আটকাতে পারবো না। তখন আমাদের হাতে এই সমস্ত ব্যবস্থা থাকা দরকার।