কেনিয়ার গবেষণা ও সংরক্ষণ সংস্থা সিএসইউ এবং সেভ দ্য এলিফ্যান্টস-এর পোস্ট ডক্টরেট মাইকেল পারডো, বলেছেন ডলফিনদের মধ্যে বা তোতাপাখিদের মধ্যে একে অপরকে ‘নাম ধরে’ ডাকার অভ্যাস দেখা যায়। এই তালিকাতে হাতিও যুক্ত হল।
বিবর্তনের ধারায় হাতি এবং মানুষ লক্ষ লক্ষ বছর আগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উভয় প্রজাতিই সামাজিকভাবে জটিল ও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। মানুষের মতো হাতিরা পরিবার, সামাজিক গোষ্ঠী এবং বৃহত্তর গোত্রের কাঠামোর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। হাতিরা দৃষ্টি, ঘ্রাণ, স্পর্শ ছাড়াও একে অপরের সাথে কথা বলে তাদের কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। তাই উভয় প্রজাতিতে প্রয়োজন অনুসারে সম্ভবত ভোকাল লেবেলিং অর্থাৎ বিমূর্ত শব্দের মাধ্যমে অন্যান্য ব্যক্তির নামকরণের সূচনা হয়েছে। তাদের ডাক নানা তথ্য প্রকাশ করে – তাদের পরিচয়, বয়স, লিঙ্গ, মানসিক অবস্থা এবং আচরণসহ অনেক তথ্য তাদের ডাক থেকে বোঝা যায়।
কেনিয়াতে চার বছর ধরে বিস্তৃত গবেষণায় ও ১৪ মাস যাবত ফিল্ডওয়ার্কে, গাড়িতে হাতিদের অনুসরণ করে তাদের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করা হয়েছে। সম্বুরু ন্যাশনাল রিজার্ভ এবং অ্যাম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্কে ১১৭ টা হাতির জন্য, ১০১ টা হাতির ৪৭০ টা স্বতন্ত্র ডাক রেকর্ড করা হয়েছে। দেখা গেছে হাতি নিজেদের অভিব্যক্তি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। উইটেমায়ার বলেন হাতিদের প্রতিক্রিয়া তাদের পরিচিতদের কাছে বোঝা সহজ। গবেষকরা হাতিদের, তাদের বন্ধু হাতি আর পরিবারের সদস্যদের ডাকের রেকর্ডিং শুনিয়ে দেখেছিলেন, নিজেদের নামের ডাক শুনে হাতিরা বেশ উদ্দীপনার সাথে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিল। কিন্তু হাতিরা যখন অন্য হাতিদের ডাকছিল তখন তাদের বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি এর থেকে বোঝা যায় তারা তাদের নাম চিনতে পেরেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে হাতি, মানুষের মতো, কথোপকথনে সবসময় একে অপরকে নাম ধরে সম্বোধন করে না। দীর্ঘ দূরত্বে থাকলে বা প্রাপ্তবয়স্করা যখন বাচ্চা হাতির সাথে কথা বলে তখন নাম ধরে বেশি সম্বোধন করে।
হাতিদের বৌদ্ধিক জ্ঞান ও যোগাযোগ ক্ষমতার ভিত্তিতে এই গবেষণা থেকে আশা করা হচ্ছে, এই বিপন্ন প্রজাতিকে তাদের দাঁতের লোভে চোরাশিকারীর হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের প্রচেষ্টা করলে ভবিষ্যতে হাতিদের রক্ষা করা সহজ হতে পারে।