আমরা সকলে মনে করি আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আছে কারণ বেশিরভাগ সময়, আমরাই বেছে নিই আমরা কী খাবো, কীভাবে জুতোর ফিতে বাঁধবো, কী পড়বো। সাম্প্রতিককালে স্ট্যানফোর্ডের নিউরোবায়োলজিস্ট রবার্ট স্যাপোলস্কি তার বইয়ে বলেছেন যে আমরা যেভাবে কাজ করি সেভাবে কাজ করার জন্য আমরা কার্যত “সংকল্পবদ্ধ” আর এটা আমাদের ইতিহাসের কারণে ঘটছে এবং সম্ভবত অন্য কোনো উপায়ে আমরা কাজ করতে পারবোনা তাই ঘটেছে। ডিটারমিনিজম বা নিশ্চয়বাদ বা নিয়ন্ত্রণবাদ অনুসারে, যেমন একটা পাথরকে ছুঁড়ে দিলে পাথরটি অভিকর্ষের কারণে নীচের দিকে পড়ে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত হয়, তেমনি আমাদের স্নায়ু কোশ আমাদের পরিবেশ, আমাদের বেড়ে ওঠা, হরমোন নিঃসরণ, জিনগত কারণ, সংস্কৃতি এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অগণিত অন্যান্য কারণের সরাসরি ফলাফল হিসাবে একটি নির্দিষ্ট ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখায়। এবং আমাদের ইচ্ছাশক্তি যতই “স্বাধীন” মনে হোক না কেন এটি সত্য। কিন্তু স্যাপোলস্কির এই চিন্তাভাবনার সঙ্গে শুধুমাত্র ১১% দার্শনিক একমত, ৬০% যারা মনে করেন যে কার্যকারণে নির্ধারিত হওয়া স্বাধীন ইচ্ছা থাকা এবং নৈতিকভাবে দায়িত্বশীল হওয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
“স্বাধীন ইচ্ছা” এবং “দায়িত্ব” এর অর্থ এক একজন এক একভাবে উপলব্ধি করে। অনেকে মনে করে স্বাধীন ইচ্ছা হল কিছু বিকল্পের মধ্যে থেকে নিজের বেছে নেওয়ার ক্ষমতা। ডিটারমিনিজম অনুযায়ী যদি আমরা কার্যকারণে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই তখন আমাদের কাছে ওই নির্দিষ্ট বিষয়টি বেছে নেওয়া ছাড়া অন্য উপায় থাকে না। কিন্তু এই চিন্তাধারার বিপরীত উদাহরণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মনে করুন যখন আপনি এই নিবন্ধটি পড়া শুরু করেছিলেন তখন কেউ গোপনে ১০সেকেন্ডের জন্য আপনার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল, সেই সময়ে আপনি ঘর থেকে বের হতে পারেননি। কিন্তু অন্যদিকে আপনার ঘর ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না কারণ আপনি পড়া চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন – তাই আপনি যেখানে আছেন সেখানেই থেকে গেছেন। আপনার পছন্দটি কী তবে স্বাধীন ছিল? অনেকে তর্ক করবে যে আপনার ঘর ছেড়ে যাওয়ার উপায় ছিল না, তাই আপনার ইচ্ছাও স্বাধীন নয়। সুতরাং আপনার কাছে বিকল্প নেই মানে আপনার স্বাধীন ইচ্ছা নেই তা ঠিক নয়। এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সিদ্ধান্তটি কীভাবে এল। স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি বিশেষজ্ঞ জন মার্টিন ফিশার ব্যাখ্যা করেছেন যে, স্যাপোলস্কির স্বাধীন ইচ্ছার ধারণাটির জন্য কোনও যুক্তি উপস্থাপন করতে তিনি ব্যর্থ। কম্প্যাটিবিলিস্টরা বিশ্বাস করেন মানুষ প্রতিনিধি মাত্র। আমরা অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করার চেষ্টা করি, ঠিক বা ভুল বুঝতে পারি এবং নৈতিক কারণে কাজ করি। আমাদের বেশিরভাগের মধ্যে, বেশিরভাগ সময়, একটি নির্দিষ্ট ধরণের স্বাধীনতা থাকে এবং আমাদের কর্মের জন্য আমরা দায়ী – এমনকি যদি আমাদের আচরণ “নির্ধারিত” থাকে তাহলেও। কম্প্যাটিবিলিস্টরা মনে করেন যে ডিটারমিনিজম দ্বারা সীমাবদ্ধ হওয়া মানে একটি দড়ি দিয়ে চেয়ারে আবদ্ধ হওয়ার মতো নয়। আপনাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল তাই একটি ডুবন্ত শিশুকে আপনি বাঁচাতে ব্যর্থ আর একটি ডুবন্ত শিশুকে আপনি বাঁচাতে ব্যর্থ কারণ আপনি “সংকল্পবদ্ধ” ছিলেন যে আপনি শিশুর কথা ভাবেন না এই দুটি এক বিষয় নয়। প্রথমটি একটি অজুহাত. কিন্তু পরেরটি নিন্দার কারণ। কম্প্যাটিবিলিস্টদের সঠিক প্রমাণ করা এই গোটা বিতর্কের উদ্দেশ্য নয়। স্বাধীন ইচ্ছা একটি বহুমুখী বিষয়। কোনো কিছুর জন্য কেউ দায়ী নয় তা বোঝার জন্য সমস্ত বিষয় ও অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে যুক্ত করা প্রয়োজন। এবং স্যাপোলস্কি এটা করেনি। স্যাপোলস্কির বিরাট ভুল ছিল যে তিনি তার প্রশ্নটিকে সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানভিত্তিক ভেবেছেন, বিজ্ঞান যা বলে তার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর দেওয়া হয়েছে। যদিও বিজ্ঞান প্রাসঙ্গিক, আমাদের প্রথমে জানতে হবে- স্বাধীন ইচ্ছা কী (মেটাফিজিকাল প্রশ্ন) এবং এটি কীভাবে নৈতিক দায়িত্বের সাথে সম্পর্কিত (মান নির্ণায়ক প্রশ্ন)। এটি এমন একটি বিষয় যা দার্শনিকরা দীর্ঘকাল ধরে আলোচনা করছেন।