‘অলিম্পাস মনস’- মঙ্গল গ্রহের একটি সুবৃহৎ আগ্নেয়গিরি। দেখতে অনেকটা যোদ্ধার ঢালের মতো বলে একে শিল্ড আগ্নেয়গিরি বলে। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে উঁচু এবং বৃহত্তম শিল্ড আগ্নেয়গিরি। উচ্চতায় প্রায় ১৩.৬ মাইল বা ২২ কিলোমিটারের আগ্নেয়গিরি, অলিম্পাস মনস, আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতার প্রায় তিনগুণ। এর ব্যাস প্রায় ৩৭০ মাইল, যা আকারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের সমতুল্য। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির মার্স এক্সপ্রেস সৌরজগতের বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি অলিম্পাস মনসের অত্যাশ্চর্য চিত্র ধারণ করেছে যা এই মঙ্গলগ্রহের পরিবেশ এবং অশান্ত অতীতকে তুলে ধরেছে। ১৯৭১ সালে প্রথম নাসার মেরিনার-৯ মহাকাশযান অলিম্পাস মনসকে চিহ্নিত করে।
অলিম্পাস মনস আগ্নেয়গিরির চারিদিকে বিশেষ করে উত্তর ও পশ্চিম দিকে ঘিরে থাকা জিহ্বার আকৃতির ধসকে “অরিওল” বলা হয়। কয়েকশো মিলিয়ন বছর আগে যা ঘটেছিল তার গল্প বলে এই অরিওল। তথ্য থেকে জানা যায় যে আগ্নেয়গিরির নীচে প্রচুর পরিমাণে লাভা প্রবাহিত হওয়ার ফলে ভূমি ধসের সূত্রপাত হয় যা আগ্নেয়গিরির গা বেয়ে নীচে নেমে যায় এবং নীচের বরফ এবং জল ধারণকারী স্তরের সাথে মিলিত হয়। বিজ্ঞানীদের মতে লাভা থেকে তীব্র উত্তাপের কারণে বরফ গলে যায় যার ফলে আগ্নেয়গিরির পাথর ভেঙে যায়, ধস নামে এবং আশেপাশের সমতল ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধস ক্রমে অলিম্পাস মনস থেকে দূরে সরে যাওয়ার সাথে সাথে, ভূমি সঙ্কুচিত এবং প্রসারিত হওয়ার ফলে বলিরেখার মতো তৈরি করে। লাইকাস সুলসির নতুন ছবিতে এই বৈশিষ্ট্য ধরা পরেছে। লাইকাস সুলসি হল অলিম্পাস মনসের উত্তর-পশ্চিমের পাহাড় এবং উপত্যকা বিশিষ্ট একটি নীচু এলাকা। সময়ের সাথে সাথে, বাতাসের ক্ষয় এবং বালি জমা হওয়ায় এই বলিরেখা আরও প্রকট হয়েছে। একটি ছবিতে ইয়েলওয়া ক্রেটারও দেখা গেছে, যা অলিম্পাস মনসের শিখর থেকে ১০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই গর্তটির ব্যাস ৮ কিলোমিটারের বেশি, যা প্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতার সমান। এই নতুন চিত্র মঙ্গল গ্রহের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস এবং এর প্রাকৃতিক ভূচিত্রকে রূপদান করতে অতীতে এই গ্রহে ঘটে যাওয়া শক্তিশালী প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ওপর আলোকপাত করে।