আমরা সকলেই জানি যে ক্রীড়াবিদরা তাদের অঙ্গ এবং শরীরের পেশি সঞ্চালনের জন্য অনেক সময় ব্যয় করে, তবে গাইয়েরা কণ্ঠের পেশির প্রশিক্ষণ করে কীভাবে? গবেষকদের মতে আমরা এই পেশিগুলোর উপর অনুশীলনের প্রভাব সম্পর্কে খুব কমই জানি। গান গাওয়া সম্ভবত সবচেয়ে জটিল এক পদ্ধতি যা মানুষ এবং কিছু পাখি কোনো এক অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় করতে সক্ষম। একজন ভালো গাইয়ে হওয়ার জন্য, আমাদের শিখতে হয় কীভাবে নিপুণভাবে শরীরের শত শত পেশি সমন্বিতভাবে ও সূক্ষ্মতার সাথে আন্দোলিত করতে হয়। অতএব, আমাদের শুধু প্রতিভাবান হলে চলবে না, সাথেসাথে প্রচুর অনুশীলনও প্রয়োজন।
নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন সমীক্ষা রিপোর্ট করেছে যে পুরুষ গাইয়ে পাখিদের গান গাইতে রোজ অনুশীলনের প্রয়োজন আর মহিলা পাখিরা লক্ষ্য রাখে যে পুরুষ পাখি ঠিক মতো অনুশীলন করছে কিনা। পাখিদের জন্য গান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা গান গায় তাদের সাথীকে আকর্ষণ করতে, তাদের অঞ্চল রক্ষা করতে এবং সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখতে। গবেষকরা দেখেছেন গাইয়ে পাখিদেরও কণ্ঠের পেশির উৎকৃষ্টমানের কর্মক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এবং এটি কেবল কোনও প্রশিক্ষণ নয়, এটি বিশেষভাবে গান গাওয়ার অনুশীলন যা গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে গান গাওয়া পাখিরা তাদের কণ্ঠ বা ভোকাল পেশি একেবারেই ব্যবহার না করলে কয়েক দিনের মধ্যেই সেগুলো অনেক ধীর এবং দুর্বল হয়ে যায়। এমনকি দেখা গেছে যদি পাখিরা সাত দিন ধরে গান না গায় তবে তাদের ভোকাল পেশি ৫০% শক্তি হারিয়ে ফেলে। অর্থাৎ ‘হয় ব্যবহার করো নয়তো হারিয়ে ফেলো’। আর মহিলা গাইয়ে পাখিরা পুরুষদের কণ্ঠের এই তারতম্য ঠিক ধরে ফেলে।
মজার বিষয় হল, এই ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট যে কেন পাখিরা প্রতিদিন গান করে। সারা বিশ্বে, বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে, পাখিরা প্রতিদিন ভোরবেলায় গান গায়। তারা কেন এটি করে তা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও বিভ্রান্তিকর। গবেষক আইরিস অ্যাডাম বলেছেন আমাদের অনেক সময়ই মনে হয় এই গান বিনা কারণেই তারা গায়। পাখিরা অপ্রয়োজনেও গান গায়। কিন্তু এই গবেষণার ফলাফল দেখায় যে যদি তারা প্রতিদিন অনুশীলন না করে, তাহলে তাদের পেশির কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। তাছাড়াও অনুশীলনের অভাব তাদের গানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং মহিলা পাখিরা অনুশীলন করা পুরুষ কণ্ঠের দ্বারা আকৃষ্ট হয় তাদের গান পছন্দ করে। সুতরাং পাখিদেরও তাদের গানকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য প্রতিদিন অভ্যাসের জন্য প্রচুর সময় এবং শক্তি বিনিয়োগ করতে হয়। এবং এটি সমস্ত প্রাণীর জন্য সত্য হতে পারে। গবেষকদের মতে মানুষের স্বরযন্ত্রের পেশি অধ্যয়ন করা খুব চ্যালেঞ্জিং তাই এই ফলাফল মানুষের ক্ষেত্রে স্পিচ থেরাপি এবং কণ্ঠ্য প্রশিক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে।