সুন্দরবনের বাতাসে আজ ভারী ধাতুর ঘনত্ব প্রচুর বেশি এবং তা অম্লীয়ও, এমন কথা জানাচ্ছে বোস ইনস্টিটিউট এবং আইআইটি কানপুরের অধ্যাপক এবং গবেষকদের একটি দল। দূষিত বায়ু দীর্ঘ সময় ধরে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করতে পারে। ডেকে আনতে পারে বিপর্যয়। এই ম্যানগ্রোভ বনভূমি ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য ঝড়ের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা রেখা হিসাবে কাজ করে, রক্ষা করে সুন্দরবন এবং তার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোকে। ম্যানগ্রোভ গাছের প্রাকৃতিক জৈবিক প্রক্রিয়া প্রভাবিত হলে, গাছের দেওয়া এই প্রতিরক্ষামূলক আবরণ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে। বায়ুতে অম্লজাতীয় উপাদান বা ভারী ধাতুর উপস্থিতি গাছের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, ব্যাহত করতে পারে ম্যানগ্রোভের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে, এমনকি তাদের ধ্বংসের দিকেও নিয়ে যেতে পারে। সুন্দরবনে নদী পারাপারের জন্য ব্যবহৃত বেশিরভাগ নৌকা বা থ্রি-হুইলার ভ্যান এমন কমজোরি ইঞ্জিন দ্বারা চালিত যে সেগুলো বাতাসে দূষণকারী পদার্থ নির্গত করে। সুন্দরবনের আশপাশের রাজ্যগুলো, এমনকি সুদূর উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রবাহিত দূষিত বায়ু এই অঞ্চলের দূষণের জন্য দায়ী। এই দূষত বায়ু প্রভাব ফেলে অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ ও বসবাসকারী মানুষের উপর। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে সুন্দরবনের মানুষদের অবদান নেই বললেই চলে, কিন্তু তাদের বহন করতে হচ্ছে সুবিশাল সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমিতে সৃষ্ট দূষণের ক্ষতি । সুন্দরবনকে বাঁচাতে জরুরি ম্যানগ্রোভের সংরক্ষণের সাথে সাথে জরুরি দূষণ নিয়ন্ত্রণ। দীর্ঘ দিন ধরেই এ কথা বলে আসছেন পরিবেশবিদেরা। সুন্দরবনে হোটেল, রিসর্ট বা মাছের ভেড়ি তৈরির জন্য যে ভাবে ম্যানগ্রোভ কাটা হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাঁদের। পরিবেশবিদদের দাবি, আয়লা, বুলবুল, আমপান, ইয়াসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিহত করে সুন্দরবনকে রক্ষা করেছে গরান, গেঁওয়া, বাইন, কেওড়া, সুন্দরী গাছের অরণ্য।