শেষে পিঁপড়েরা সিংহের খাবার চুরি করল? না, এটা কোনো ঈশপের গল্প নয়। এই তথ্য উঠে এসেছে এক নতুন সমীক্ষার ফলাফল হিসেবে। জানা গেছে কীভাবে আফ্রিকান সাভানা অঞ্চলে একটি সামান্য পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ খাদ্য জালের উপর বৃহত্তর প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণায় জানা গেছে ইনভেসিভ অ্যালিয়ান স্পিসিস বা অনুপ্রবিষ্ট আগ্রাসী প্রজাতির পিঁপড়ে সিংহকে তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে। দেখা গেছে কীভাবে পিঁপড়েরা কেনিয়ার সাভানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে সেই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যে নাটকীয় রূপান্তর সৃষ্টি করে যার ফলে স্থানীয় সিংহরাও তাদের শিকার পরিবর্তনে বাধ্য হয়।
প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার বিপুল ক্ষমতা রয়েছে এই আগ্রাসী প্রজাতির। প্রথমে এরা ফাঁকা জায়গা বেছে নেয়। পরে সেখানে দ্রুত বংশবিস্তার করে। অত্যন্ত লড়াকু স্বভাবের এই প্রাণী বা উদ্ভিদ এতটাই আগ্রাসী যে তার আশপাশে অন্য কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ থাকতে পারে না। মানুষের ক্রিয়াকলাপ এইসব প্রাণী, পোকামাকড় এবং গাছপালাকে নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিবেশবিদ টড পামারের মতে প্রায়শই অনেক ছোটো ছোটো জিনিস বিশ্ব বড়ো বড়ো পরিবর্তন এনে দেয়। এই ক্ষুদ্র ক্ষতিকারক প্রজাতির পিঁপড়েগুলো সম্ভবত ১৫ বছর আগে প্রথম দেখা গিয়েছিল, কিন্তু তখন তা সবার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। এখন দেখা যাচ্ছে যে তারা এই তৃণভূমি অঞ্চলকে খুব সূক্ষ্মভাবে রূপান্তরিত করছে কিন্তু তার প্রভাব হচ্ছে ধ্বংসাত্মক। কেনিয়ার লাইকিপিয়ার সমতল ভূমিতে একধরনের বাবলা জাতীয় গাছ বা হুস্টলিং-থর্ন অ্যাকাসিয়া থেকে এটি শুরু হয়। এই কাঁটাযুক্ত গাছগুলো ক্রিম্যাটোগেস্টার গণের অন্তর্ভুক্ত কিছু স্থানীয় প্রজাতির পিঁপড়ের সাথে পারস্পরিকভাবে উপকারী সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল: গাছগুলো পিঁপড়েদের জন্য আশ্রয় এবং খাবার সরবরাহ করে এবং এর বিনিময়ে এই গাছ খেতে আসা ক্ষুধার্ত হাতিদের তারা তাদের হুল ফুটিয়ে গাছ খাওয়া থেকে বিরত করে। কিন্তু যখন কিছু বড়ো মাথাওয়ালা ডেঁয়ো পিঁপড়ে (ফেইডোল মেগাসেফালা) সাভানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে তখন এই চিত্রটি বদলে যায়। ফেইডোল মেগাসেফালা জাতের এই ডেঁয়ো পিপঁড়ে, ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপে উদ্ভূত হয়েছে এবং মানুষ এবং পণ্যের মাধ্যমে এই অঞ্চলে এসে পড়েছে বলে মনে করা হয়। এরা প্রায় দু দশক আগে এসে স্থানীয় পিঁপড়েদের মেরে ফেলতে শুরু করে। ফলে হাতি সহ বিভিন্ন তৃণভোজীরা এই হুস্টলিং-থর্ন অ্যাকাসিয়া গাছ খেয়ে ফেলতে থাকে। গাছের আবরণ কমে যাওয়ায় সেখানকার সিংহদের জন্য একটি সমস্যা তৈরি হয়। কারণ এই বাবলা জাতীয় গাছের আড়ালে থেকে সিংহ তাদের শিকার জেব্রাদের উপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গবেষকরা তিন বছর ধরে সেই অঞ্চলের সিংহের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে ডেঁয়ো পিঁপড়ের ফলে জেব্রা শিকারের হার তিনগুণ হ্রাস পেয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল এর ফলে সিংহের জনসংখ্যা হ্রাস পায়নি- বরং তারা তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে ফেলেছে। সিংহরা বড়ো দলে মোষদের উপর আক্রমণ শুরু করে। গবেষকদের অনুমান সিংহের পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস খাদ্য শৃঙ্খলে প্রভাব ফেলছে।