বিশ্বে প্রতি বছর সাপের কামড়ে মারা যান বহু মানুষ। পরিসংখ্যান অনুসারে প্রতি বছর ৮০,০০০ থেকে ১৪০,০০০ মানুষ বিষাক্ত সাপের কামড়ে মারা যায়, আবার ৪০০,০০০ মানুষ সাপের কামড়ে অন্ধ হয়ে যায় বা অঙ্গহানি ঘটে। ভারতবর্ষে সেই সংখ্যাটি প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় মৃতের সংখ্যার চার গুণ। পরিসংখ্যানটি উদ্বেগের। ২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্পদংশনকে ক্রান্তীয় অঞ্চলের ‘নেগলেক্টেড ডিজ়িজ়’ ঘোষণা করেছিল। অনেক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্পদংশন প্রতিরোধ এবং বিষক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করে, যাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে আঞ্চলিক স্তরে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্পদংশনজনিত মৃত্যু এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ৫০% হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। সাপের কামড় নিয়ে সচেতনতা আগের তুলনায় বেড়েছে।
গবেষকদের ক্ষেত্রে প্রতিষেধক তৈরি করা প্রয়োজন হওয়া সত্ত্বেও, সাপের বিষ কীভাবে কাজ করে তা অধ্যয়ন করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীরা একটি ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করেছেন যার মাধ্যমে বোঝা যায় কীভাবে সাপের বিষ রক্তনালীকে ভেদ করে রক্তে প্রবেশ করে। বিজ্ঞানীরা এই মডেলের নাম দিয়েছেন ‘অর্গান-অন-এ-চিপ’ মডেল। তাদের মতে এই মডেলের কারণে প্রাণী পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা নেই।
অনেক সাপের বিষে ক্ষতিকারক টক্সিন থাকে যা রক্তনালীকে ধ্বংস করে। এর ফলে প্রদাহ ঘটে, রক্তক্ষরণ হয় এবং শেষ পর্যন্ত অঙ্গহানি ঘটে বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই বিষাক্ত পদার্থের প্রবেশ রোধ করতে পারলে অগণিত জীবন এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাঁচানো যেতে পারে। তবে পরীক্ষাগারে গবেষণা সাধারণত কোশ-ভিত্তিক হয়ে থাকে, এবং একটি জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে সাপের দংশনে কী ঘটে তা সঠিকভাবে বর্ণনা করা যায় না। সাপের বিষের মধ্যে থাকা বিষ বা টক্সিনকে আটকে দেওয়া সম্ভব হবে কিনা তা জানতে এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে কৃত্রিম রক্তনালীর। গবেষণাগারে কোশগুলোকে ত্রিমাত্রিক টিউব বা নলের মধ্যে বৃদ্ধি করানো হয় যা ছোটো ছোটো রক্তনালীর অনুরূপ। এই কৃত্রিম রক্তনালীতে গবেষকরা বিষযুক্ত তরল পাম্প করেন এবং তার ফলে কোশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করেন। সায়েন্টিফিক রিপোর্টে ফলাফল প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখানো হয়েছে বিষের প্রভাবে কীভাবে কোশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রক্তনালীর দেয়াল ধ্বংস হয়ে যায়।