জলবায়ু পরিবর্তন সময় মাপাকে কঠিন করে তুলছে। সারা বিশ্বে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের বরফের স্তর গলে যাচ্ছে সাথে সাথে এই বরফ গলা জল স্থানান্তরিত হয়ে আমাদের গ্রহের ভর কেন্দ্রের পরিবর্তন ঘটিয়েছে যার ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কমে যাচ্ছে। গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকাকে আচ্ছাদিত করে রাখা মাইলের পর মাইল পুরু বরফের স্তরের ভর মহাসাগরের উপর একটি শক্তিশালী মহাকর্ষীয় টান প্রয়োগ করে। এই বরফের চাদর গলে যাওয়ার ফলে সমস্ত ভর মেরু থেকে বিষুবরেখার দিকে সরে যায়, আর সেই টানকে হ্রাস করে এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনকেও ধীর করে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই অস্বাভাবিক ফলাফল, পৃথিবীর ঘূর্ণন গতিকে প্রভাবিত করে এমন অন্যান্য শক্তির সাথে মিথস্ক্রিয়া করে ভবিষ্যতে আমাদের সময় মাপার উপায়কেও পরিবর্তন করতে পারে। গবেষকদের মতে এই ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাবটি সমগ্র পৃথিবীর ঘূর্ণন পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
নেচারে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা অনুসারে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে, আমাদের প্রথম “লিপ সেকেন্ড” বাদ দিতে হতে পারে। বিশ্বের বেশিরভাগই ঘড়ি এবং সময় নিয়ন্ত্রণ করতে কোঅর্ডিনেটেড ইউনিভার্সাল টাইম (UTC) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ধীর হয়ে যাওয়ার কারণে মাঝে মাঝে UTC-তে একটি লিপ সেকেন্ড যোগ করা হয়। এর ফলে ইন্টারন্যাশেনাল অ্যাটমিক টাইম (TAI) যা পারমাণবিক ঘড়ি দ্বারা পরিমাপ করা হয় এবং পর্যবেক্ষণ করা সৌর সময় (UT1) যা পৃথিবীর ঘূর্ণনে অনিয়ম এবং গতি ধীর হয়ে যাওয়ার কারণে পরিবর্তিত হয়- এই দুটির মধ্যে পার্থক্য দূর করে। একটি লিপ সেকেন্ড যোগ করা হলে, একটি নির্দিষ্ট দিনের শেষ মিনিট ৬১ সেকেন্ড পর্যন্ত প্রসারিত হয়, তখন অতিরিক্ত সেকেন্ডটি ২৩:৫৯:৬০ হিসাবে লেবেল করা হয়। ধারণাটি ১৯৭২ সালে চালু হয় এবং চালু হওয়ার পর থেকে টাইমকিপাররা ঘড়িতে ২৭ লিপ সেকেন্ড যোগ করেছে। তবুও, বিজ্ঞানীরা – এই সিস্টেমটি খুব বেশি পছন্দ করেন না কারণ এটি নিয়মিত ঘটে না, শুধুমাত্র যখন এর প্রয়োজন মনে হয় তখন ঘটে। এবং আর্থিক বাজার এবং স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম, যা সুনির্দিষ্ট সময়ের উপর নির্ভর করে, তাদের প্রত্যেকের একটি লিপ সেকেন্ড অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। তাই ২০২২ সালে, মেট্রোলজিস্টদের একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম লিপ সেকেন্ডের বদলে বেশি সময়, সম্ভবত এক মিনিট, যোগ করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। দলটি ২০২৬ সালে তার পরবর্তী বৈঠকে এই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেষবার একটি লিপ সেকেন্ড যোগ করার প্রয়োজন ছিল ২০১৬ সালে। স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অফ ওশানোগ্রাফির একজন ভূ-পদার্থবিদ, ডানকান অ্যাগনিউ-এর গণনা থেকে জানা যায় এই মুহূর্তে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সবচেয়ে বড়ো পরিবর্তন তার অভ্যন্তর থেকে সৃষ্ট হচ্ছে- পৃথিবীর কেন্দ্রের গতি ধীর হলেও আসলে বাইরের স্তরগুলোর ঘূর্ণন দ্রুততর হচ্ছে। এই মন্থরতার কারণে বর্তমান সিস্টেমের অধীনে, টাইমকিপারদের অবশ্যই ইউটিসি-তে লিপ সেকেন্ড যোগ করার পরিবর্তে লিপ সেকেন্ড অপসারণ করতে হবে যাতে সবকিছু সমন্বিত থাকে।