২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে বিশ্ব উষ্ণায়নকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রাক-শিল্পায়ন যুগের থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস অধিকের মধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নকে ধরে রাখার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, কারণ সেই সীমা পেরিয়ে গেলে মানুষের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়তে পারে। এক দশক পূর্ণ হওয়ার আগেই সেই সীমা আমরা অতিক্রম করে ফেলেছি, গত বছর বিশ্বের তাপ ছিল ১৮৫০-১৯০০ সালের গড় তাপমাত্রার থেকে ২.০৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। হিমবাহের গলন, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, অরণ্যের দ্রুত হ্রাস –এই রকম অনেক প্রভাবই দেখা যাচ্ছে। এখন প্রধান লক্ষ্য হল এই উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ করা। প্রকৃতি নিজেই এই সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছে। নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে একটি সাধারণ সামুদ্রিক শৈবাল একধরনের যৌগ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা পৃথিবীর জলবায়ুকে শীতল করতে সহায়তা করে।
ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাংলিয়া (ইউইএ) এবং ওশান ইউনিভার্সিটি অফ চায়না (ওউসি)-র গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেছেন কীভাবে এই ক্ষুদ্র সামুদ্রিক জীব আমাদের গ্রহকে প্রভাবিত করে। গবেষণাটি নেচার মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত হয়।
অ্যালগাল ব্লুম গঠনকারী পেলাগোফাইসি শৈবাল, ডাইমিথাইলসালফোনিওপ্রোপিয়েনেট বা (ডিএমএসপি) নামের এক যৌগ উৎপাদন করে। পেলাগোফাইসি শৈবাল পৃথিবীর বুকে প্রভূত পরিমাণে দেখা যায়। তবে আগে তারা ডিএমএসপি-র গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদক হিসাবে পরিচিত ছিল না। স্বভাবতই আবিষ্কারটি চাঞ্চল্যকর কারণ ডিএমএসপি অ্যান্টিস্ট্রেস যৌগ হিসেবে পরিচিত, অন্যান্য অণুজীবের খাদ্যের উৎস এবং জলবায়ু ঠান্ডা করার গ্যাসের প্রধান উৎস। প্রতি বছর, পৃথিবীর মহাসাগরে সামুদ্রিক অণুজীবরা শত কোটি টনের ডিএমএসপি উত্পাদন করে। এই যৌগ অণুজীবদের সমুদ্রের জলের লবণাক্ততা, শীতলতা, উচ্চ চাপ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মতো বিভিন্ন চাপ থেকে রক্ষা করে, তাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। সমুদ্রতীরের একটা পরিচিত গন্ধ রয়েছে যার কারণ হল ডাইমিথাইলসালফাইড (ডিএমএস) নামের একটি গ্যাস আর ডিএমএসপি হল এই ডাইমিথাইলসালফাইড গ্যাসের প্রধান উৎস। এই গবেষণা জানায় যে ডিএমএসপি উত্পাদন, এবং ফলস্বরূপ ডিএমএস নির্গমণের পরিমাণ পূর্বে যা ভাবা হয়েছিল তার থেকে বেশি এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে অণুজীবের ভূমিকা রয়েছে। ডিএমএস একটি সংকেত অণু হিসাবেও কাজ করে, সামুদ্রিক জীবকে তাদের খাদ্যের দিকে যেতে সাহায্য করে এবং শিকারীদের প্রতিহত করে। বায়ুমণ্ডলে ডিএমএস নির্গত হলে তার অক্সিডেশনের ফলে উৎপাদিত বস্তু মেঘ তৈরি করতে সাহায্য করে যা পৃথিবী থেকে সূর্যালোক প্রতিফলিত করে, এবং আমাদের গ্রহকে শীতল করে। এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটি পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য এবং বিশ্বব্যাপী সালফার চক্রের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার মাধ্যমে মহাসাগর থেকে সালফার স্থলভূমিতে ফিরে আসে। গবেষকরা মনে করেন যে প্রাকৃতিক পরিবেশে পেলাগোফাইসি শেত্তলার আরও অধ্যয়ন প্রয়োজন, সেইসাথে অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের উপর আরও বিশদ গবেষণা প্রয়োজন।