বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। গবেষণা অনুযায়ী গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ বেড়ে চলার জেরে আগামী এক দশকের মধ্যে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির হার পেরোতে পারে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের হার হবে আরও দ্রুত। নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে গোটা বাস্তুতন্ত্রে। এই হিট ওয়েভ বা তাপপ্রবাহ শুধু ভূমিতে নয় আঘাত হানছে সমুদ্রেও। প্রায় এক তৃতীয়াংশ সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ সমুদ্রের পৃষ্ঠে শনাক্ত করা যায় না, এমন কথাই জানাচ্ছে এক নতুন গবেষণার প্রতিবেদন। নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এই হিট ওয়েভের প্রকোপ সমুদ্র পৃষ্ঠে অনেক বেশি। সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর বেশ বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক ধরনের জীব তাপমাত্রার এই পরিবর্তনের সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। যেমন, উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের কারণে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সামুদ্রিক প্রাণী কডের সংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। সামুদ্রিক খাদ্য শৃঙ্খলের আন্তঃসংযোগের কারণে, বিভিন্ন সামুদ্রিক পাখিরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। সামুদ্রের বিপুল জলরাশির এই উষ্ণতা বৃদ্ধি প্রায়শই উপগ্রহ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু সমুদ্রের গভীরতা অধরা থেকে যায়। আক্ষরিক অর্থে বিষয়টি গভীরভাবে দেখার জন্য, পরিসংখ্যানবিদ ফুরোং লি এবং সহকর্মীরা ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে সমুদ্রের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা এবং স্রোত পরিমাপের জন্য কম্পিউটার সিমুলেশনের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। এই ধরনের সিমুলেশন বিশ্বব্যাপী সমুদ্র অধ্যয়নের একটি শক্তিশালী উপায়। গবেষকরা দেখেন অন্তত পাঁচ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে সমুদ্রের জল তার পার্শ্ববর্তী স্তরের চেয়ে অস্বাভাবিকভাবে উষ্ণ। এই ধরনের ঘটনা বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালনের পরিবর্তন যেমন সমুদ্রের স্রোতের পরিবর্তনের কারণে ঘটতে পারে। লি এবং তার সহযোগীরা প্রতি বছর কয়েকশো সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন। আশ্চর্যের বিষয় ছিল যে এই ঘটনার ৩টির মধ্যে ১টি ধরা যেত না এবং জলের উপরের ১০ মিটারের মধ্যে এগুলো কখনও দৃশ্যমান ছিল না। তাই গবেষকদের অনুমান সমুদ্রের গভীরে এই ধরনের তাপপ্রবাহ পূর্বের ধারণার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দেখা যায় ফলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। গবেষকরা আরও বলেন সমুদ্রের এই তাপপ্রবাহ থেকে নিজেদের বাঁচাতে সামুদ্রিক প্রাণীদের গড়ে শত শত কিলোমিটার সাঁতার কাটতে হয়। এবং যেসব প্রাণীদের নড়াচড়ার ক্ষমতা সেভাবে নেই তাদের কাছে এই তাপপ্রবাহ প্রায়শই মারাত্মক প্রমাণিত হয়। যেমন গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে উষ্ণতার কারণে কোরাল ব্লিচিং ঘটে অর্থাৎ প্রবালগুলো সাদা হয়ে যায়।