বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দলের গবেষণা অনুসারে গভীর সমুদ্রের কালো অন্ধকারে কিছু বিশেষ ধরনের প্রাণীই বসবাস করে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪,৪৩৬ ফুট নীচে, অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা প্রাণীদের বেশিরভাগেরই নরম, স্পঞ্জের মতো দেহ রয়েছে। আর ঠিক তার ওপরে শক্ত-খোলসযুক্ত শামুক জাতীয় প্রাণী বা মোলাস্কের আনাগোনা। এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে খোলসযুক্ত প্রাণী সমুদ্রে সেখানেই দেখতে পাওয়া যাবে যেখানে সেই সেল বা খোলস তৈরির উপাদান সহজলভ্য। তাদের মতে এই তথ্য আমাদের সমুদ্রের এই অঞ্চলের ঠান্ডা, অন্ধকার এবং বিপদসংকুল পরিবেশের জীববৈচিত্র্যকে মানুষের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারবে।
ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টারের পরিবেশবিদ এরিক সাইমন-লেডো বলেছেন কর্দমক্ত অতল সমুদ্রতল প্রাথমিকভাবে, বহু দশক আগে, খাদ্যের অভাব, উচ্চ চাপ এবং অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রার কারণে ‘সামুদ্রিক মরুভূমি’ হিসাবে পরিচিত ছিল। কিন্তু গবেষণা এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে, এই বাস্তুতন্ত্রগুলো একটি বৃহৎ জীববৈচিত্র্যের রহস্য উন্মোচন করে চলেছে, যা অগভীর জলের বাস্তুতন্ত্রের সাথে তুলনীয়৷ সাইমন-লেডো এবং তার দল গভীর-সমুদ্রে রোবট ব্যবহার করে বেশ কিছু ছবি সঞ্চয় করেছে যার থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। তাদের অনুসন্ধান স্থল ছিল ক্লারিওন-ক্লিপারটন জোন নামে পরিচিত সমুদ্রতলস্থ অঞ্চল যা প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে মেক্সিকো এবং কিরিবাতির মধ্যে প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার প্রসারিত, এবং ৩৫০০ থেকে ৬০০০ মিটার গভীরতায় অবস্থিত। তারা ছবিগুলো থেকে ১০মিলিমিটারের চেয়ে বড়ো আকারের সমস্ত প্রাণীদের তালিকাভুক্ত করে দেখেন যে প্রায় ৫০,০০০-এরও বেশি প্রাণী রয়েছে। তাদের মতে সমুদ্রের অতলে নরম সি-অ্যানিমোন জাতীয় প্রাণী ও সি-কিউকাম্বারের বেশি আধিক্য ছিল এবং তুলনামূলক অগভীর অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করেছে নরম প্রবাল ও তারা মাছ বা ব্রিটেল স্টার। কিন্তু শামুক জাতীয় প্রাণীদের ৪,৪০০ মিটারের নীচে দেখা যায়নি। এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রাণীদের শক্ত খোলা ক্যালসিয়াম কার্বনেট থেকে তৈরি হয়। এই কার্বনেট সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্রের জলে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রাণীরা যৌগটি গ্রহণ করে তাদের শরীরের শক্ত আবরণ তৈরি করে। একটি নির্দিষ্ট গভীরতার নীচে, ক্যালসিয়াম কার্বনেটের পরিমাণ অপর্যাপ্ত থাকে, যার ফলে সমুদ্রের তলায় এর অভাব দেখা দেয়। গবেষণাটি নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনে প্রকাশিত হয়েছে।