সবচেয়ে বড়ো বনমানুষ সময়ের সাথে মানিয়ে নিয়ে বেশিদিন এই গ্রহে বিচরণ করতে পারেনি। কিন্তু এদের ছোটো সাথীরা পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছিল। গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন প্রায় তিন মিটার লম্বা, প্রাইমেট গিগান্টোপিথেকাস ব্ল্যাকির ওজন ৩০০ কিলোগ্রামের আশেপাশে ছিল। তার সময়ের অন্যান্য মেগাফনার মতো, এই বিশাল আকারের জন্য জি. ব্ল্যাকি ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনশীল অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি, যেখানে অন্যান্য চটপটে বনমানুষ যেমন ওরাং ওটাংরা পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়েছে। জি. ব্ল্যাকির চারটি চোয়ালের হাড় এবং কয়েক হাজার দাঁত ছিল, এদের চূড়ান্ত মৃত্যুর সময় এবং কারণ কয়েক দশক ধরে জীবাশ্মবিদদের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। জি. ব্ল্যাকির গল্পটি জীবাশ্মবিদ্যার একটি রহস্য, কীভাবে এমন একটি শক্তিশালী প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায় যখন অন্যান্য প্রাইমেটরা খাপ খাইয়ে নিচ্ছে এবং বেঁচে ছিল?
সেই বিলুপ্তির গল্পের বিশদ বিবরণ বোঝার জন্য, চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স-এর গবেষকরা ২ মিলিয়ন বছর আগে যখন এই প্রাইমেট প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল, তখন থেকে মধ্য প্লিস্টোসিনের শেষ দিকে যখন এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল সেই পরিবেশ পুনর্গঠন করেছিলেন। তারা দক্ষিণ চীনের ২২টি গুহা থেকে পাওয়া জীবাশ্ম এবং পলির নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন, যার অর্ধেকে জি. ব্ল্যাকির অবশিষ্টাংশ রয়েছে। এই জীবাশ্মগুলি জি. ব্ল্যাকির সমগ্র পরিসরে সংগ্রহের বৃহত্তম প্রমাণ। জীবাশ্মের রেকর্ড আমাদের নিশ্চিতভাবে জানায় না কেন একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেল, কিন্তু গবেষকরা সেই প্রজাতির সমকালীন পরিবেশগত এবং আচরণগত পরিবর্তনের সময়সীমা দেখে এর অদৃশ্য হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করেন। ১৫৭টি রেডিওমেট্রিক ডেটিং-এর ভিত্তিতে ছয়টি ভিন্ন ডেটিং কৌশল ব্যবহার করে গবেষকরা দেখেছেন, জি. ব্ল্যাকি ২৯৫০০০ এবং ২১৫০০০ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। পরাগ বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে জি. ব্ল্যাকির মৃত্যুর ঠিক আগে দক্ষিণ চীনের বনগুলিতে পরিবর্তন হয়েছিল। জি ব্ল্যাকির উপযুক্ত অবস্থা ছিল ঘন ক্যানোপি আচ্ছাদিত বন, প্রচুর জল এবং প্রচুর ফল। যা শুকিয়ে গিয়ে উন্মুক্ত বন, প্রায় দাবানল হয় এমন তৃণভূমি, এবং ক্রমবর্ধমান ঋতুপরিবর্তন এসেছিল। এর সবচেয়ে কাছের পরিচিত প্রাইমেট চীনা ওরাং ওটাং -ও (পঙ্গো উইডেনরিচি) বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। জি. ব্ল্যাকি যে পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনি তা তার দাঁতের বিশ্লেষণে দেখা গেছে। এদের দাঁতে দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসের লক্ষণ ছিল, যা দেখে বোঝা যায় বন উন্মুক্ত এবং শুকিয়ে যাওয়ায় এদের পুষ্টিকর ফল ও খাদ্যের বৈচিত্র্য কমে গিয়েছিল। এদের জনসংখ্যার সংখ্যা হ্রাস পেতে পেতে জি. ব্ল্যাকির ভৌগোলিক পরিসর সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল, অবশেষে এদের বিলুপ্তি ঘটে। গবেষণাটি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।