এতদিন জানা ছিল প্রাণীজগতের সবচেয়ে অনুভূতিশীল প্রাণী মানুষ পাঁচ ইন্দ্রিয়ের শক্তিতে বলীয়ান-চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ত্বক ও জিহ্বা যা আমাদের দৃষ্টি, শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্পর্শ, এবং স্বাদের অনুভূতি প্রদান করে। ভাবছেন এ আবার কী নতুন কথা। বেশিরভাগ মানুষই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সাথে পরিচিত কিন্তু সবাই জানে না যে আমাদের একটি অতিরিক্ত ইন্দ্রিয় আছে যাকে বলা হয় ইন্টারোসেপশন যা আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ অবস্থার অনুভূতি। আমাদের অভ্যন্তরীণ সংকেত, আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন ক্ষুধা, তৃষ্ণা, শরীরের তাপমাত্রা এবং হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। ইন্টারোসেপশন আমাদের এই সংকেতগুলো অনুভব করতে বা ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করে এবং নিশ্চিত করে যে শরীরের প্রতিটি সিস্টেম ভালোভাবে কাজ করছে। আমাদের শরীর যদি কখনো অসুবিধার সম্মুখীন হয় তবে এই অনুভূতি সে সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে – যেমন তেষ্টা পেলে জল পান করা বা গরম অনুভূত হলে গরম জামা খুলে রাখা। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য বা বলা যেতে পারে বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সামাজিক ক্ষমতা এবং মানসিক সুস্থতার জন্যও ইন্টারোসেপশন গুরুত্বপূর্ণ। বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং কম বা বেশি খাওয়া প্রভৃতি বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণে ইন্টারোসেপশন ব্যাহত হতে পারে। এই অনুভূতি ব্যহত হলে আমাদের ঘুম কমে যায় বা আমরা ক্লান্ত বোধ করি। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ইন্টারোসেপশন গুরুত্বপূর্ণ হলেও, পুরুষ এবং মহিলারা তাদের শরীরের এই অভ্যন্তরীণ সংকেত কতটা সঠিকভাবে উপলব্ধি করে বা সেই উপলব্ধি আলাদা আলাদা কিনা সে সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। গবেষণায় জানা গেছে যে পুরুষ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্র, ফুসফুস এবং পাকস্থলী থেকে এই অভ্যন্তরীণ সংকেতগুলো পৃথক। বয়ঃসন্ধির পর থেকে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অবস্থা যেমন উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা অনেক বেশি সাধারণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে জিনগত, হরমোন সংক্রান্ত, ব্যক্তিত্ব এবং মানসিক চাপ বা শৈশব প্রতিকূলতার সংস্পর্শে আসা প্রভৃতি বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা জানি যে এই পার্থক্য বিদ্যমান, কিন্তু এর কারণ আমাদের অজানা। গবেষকদের মতে পুরুষ এবং মহিলাদের স্বতন্ত্র শারীরবৃত্তীয় এবং হরমোনের পরিবর্তন এর কারণ হতে পারে। অভ্যন্তরীণ অনুভূতিকে প্রভাবিত করার কারণগুলো আরও ভালোভাবে বোঝা গেলে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন অবস্থার চিকিত্সার বিকাশ ঘটবে।