মানুষ, ইঁদুর এবং মাছির মতো জেলিফিশও তাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে যদিও এদের শরীরে কেন্দ্রীয় মস্তিষ্ক অনুপস্থিত। বিজ্ঞানীরা কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রথমবার এমন রিপোর্ট করেছেন। তারা ক্যারিবিয়ান বক্স জেলিফিশ-কে (Tripedalia cystophora) প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করতে এবং তা এড়িয়ে চলতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। গবেষণাটি পূর্ববর্তী ধারণা চ্যালেঞ্জ করে যে উন্নত শিক্ষার জন্য একটি কেন্দ্রীয় মস্তিষ্কের প্রয়োজন। গবেষণাটি শিখন ও স্মৃতির বিবর্তনের উপরও আলোকপাত করে। আকারে এই জেলিফিশ মানুষের আঙুলের নখের মতো। আপাতদৃষ্টিতে এই সাধারণ জেলিফিশের ঘণ্টার আকারের শরীরে একটি জটিল ভিজ্যুয়াল সিস্টেম রয়েছে যাতে ২৪ টি চোখ উপস্থিত। ম্যানগ্রোভ জলাভূমিতে বসবাসকারী প্রাণীটি ঘোলা জলের মধ্য দিয়ে চলার জন্য ও জলের নীচে গাছের শিকড়ের চারপাশে ঘুরে শিকার ধরার জন্য তার দৃষ্টিশক্তি ব্যবহার করে। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে জেলিফিশ সহযোগী শিক্ষার মাধ্যমে বাধা এড়ানোর দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এই প্রক্রিয়া মাধ্যমে তারা সংবেদনশীল উদ্দীপনা এবং আচরণের মধ্যে মানসিক সংযোগ তৈরি করে।
গবেষকের দলটি জেলিফিশের প্রাকৃতিক বাসস্থানের অনুকরণে ধূসর এবং সাদা রঙের ডোরা দিয়ে একটি গোলাকার ট্যাঙ্ক রঙ করেন যাতে ধূসর ডোরা দাগগুলো দূরের ম্যানগ্রোভের শিকড় বলে বোঝা যায়। তারা ৭.৫ মিনিট ধরে ট্যাঙ্কে জেলিফিশটিকে পর্যবেক্ষণ করেছিল। প্রাথমিকভাবে, জেলিফিশ এই আপাতদৃষ্টিতে দূরে ডোরাকাটা দাগগুলোর কাছাকাছি সাঁতরে যাচ্ছিল এবং ঘন ঘন তাদের সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছিল কিন্তু পরীক্ষা শেষে দেখা গেছে যে জেলিফিশ প্রাচীরের সাথে তার গড় দূরত্ব প্রায় ৫০% বাড়িয়ে দিয়েছে, সংঘর্ষ এড়াতে সফলভাবে ঘুরে যাচ্ছে। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে জেলিফিশ চাক্ষুষ এবং যান্ত্রিক উদ্দীপনার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে। তারপরে গবেষকরা রোপালিয়া নামক প্রাণীর ভিজ্যুয়াল সেন্সরি সেন্টারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে জেলিফিশের সহযোগী শিক্ষার অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া শনাক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। জেলিফিশের এই অঙ্গের প্রতিটিতে ছয়টি চোখ রয়েছে যা জেলিফিশকে সংকেত প্রদান করে তার গতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং যে কোনোরকম বাধা এড়াতে প্রাণীটিকে সাহায্য করে। গবেষকদের মতে এরা আশ্চর্যজনকভাবে উন্নত প্রাণীর মতো দ্রুত শিখতে পারে। তাই এটা স্পষ্ট যে সহজ স্নায়ুতন্ত্রও উন্নত শিখন করতে সক্ষম এবং স্নায়ু তন্ত্রের বিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি কোশের একটি অত্যন্ত মৌলিক প্রক্রিয়া বলে মনে করা যেতে পারে।