যতজন মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রয়োজন তার তুলনায় অঙ্গের জোগান বড়ই কম। কারণ মস্তিষ্কমৃত ব্যক্তি, রক্ত সম্পর্কিত এবং ব্লাড গ্রুপ ‘এইচ এল’-এর সাযুজ্যযুক্ত আত্মীয় ছাড়া অন্য কারও থেকে তো অঙ্গ আসেনা। মানুষের অঙ্গ নির্মাণের কোন ফ্যাক্টরী নেই। ফলে অসহায়ের মতো সারা পৃথিবীতেই বহু মানুষ অঙ্গ যেমন, লিভার, কিডনী, হার্ট বিকল হয়ে মারা যান। খোঁজ চলছে বিকল্পের। মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর দেহের থেকে অঙ্গ নিয়ে মানুষকে দেয়ার অন্যতম বড় বাধা হচ্ছে প্রতিরোধী শক্তির (ইমিউনিটীর) তা মেনে নেবার ক্ষেত্রে দ্বিধা। ফলে তা অচিরেই প্রত্যাখ্যাত হয় এবং নতুন অঙ্গ কাজ করে না। এর জন্য যেকোন প্রতিস্থাপনের পর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে প্রতিরোধী শক্তির ক্ষমতা কমানোর জন্য ওষুধের ব্যবহার। কিন্তু অন্য জীব থেকে মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপনে তাও বহুক্ষেত্রে সফল হয় না। বহুদিন ধরে এচেষ্টা চলছে। আমাদের দেশে গৌহাটীতে ডাঃ ধনিরাম বরূয়া নামে একজন সার্জেন শুয়োরের হার্ট মানুষে প্রতিস্থাপিত করে বিতর্কিত হয়েছিলেন। ভাবনা বেঁচে থাকে এবং মানুষও নতুন নতুন পথের সন্ধান করে।
১০ই মার্চ চীনের সিজিঙ্গ আর্মি হাসপাতালের তিনজন সার্জেন- ডুও কেফেড, তাও কাইশান এবং ওয়াংলিন- ৭০০ গ্রাম ওজনের একটি শুয়োরের লিভার এক মস্তিষ্কমৃত ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপিত করেন। এক্ষেত্রে লক্ষ্য ছিল এটাই দেখা যে শুয়োরের প্রতিস্থাপিত লিভার মানুষের দেহে আদৌ কাজ করে কিনা। প্রতিস্থাপিত করার আগে শুয়োর লিভারের ছটি (৬) জিন বাইরেই ল্যাবরেটারীতে পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে তিনটি জিন ইমিউন রেসপন্স সংক্রান্ত, যাতে করে মানুষের শরীর নতুন অঙ্গটি গ্রহণ করে, বর্জন না করে। ১০ দিন পর শুয়োরের লিভারটি বাইরে এনে দেখা যায় সেটি তখনও দিব্যি লিভারের কাজই করে চলেছে।
ভীষণ আশাব্যঞ্জক এই গবেষণা। অবশ্যই এক্ষেত্রে মানুষটি মৃত ছিল। বিজ্ঞান এভাবেই গুটি গুটি পায়ে এগোতে থাকে। এরপর ডুও-দের পরিকল্পনা গ্রহীতার লিভার পুরোপুরি সরিয়ে ফেলে শুয়োরের লিভার প্রতিস্থাপিত করা। অনেক পথ চলা বাকী! কিন্তু গ্যাগারীন-তেরেস্কোভা তো এভাবেই মহাকাশে একদিন একটু ঘুরে ফিরে এসেছিলেন। এখন তো বছরের পর বছর জুড়ে থাকার পরিকল্পনা চলছে। চরৈবতী!