গ্যাবনের ওজুগা শিম্পাঞ্জি প্রকল্পে কার্যরত গবেষকরা শিম্পাঞ্জিদের নিজেদের এবং অন্য শিম্পাঞ্জির ক্ষতস্থানে পোকামাকড় প্রয়োগ করতে দেখেছেন। তারা মনে করছেন, এটা প্রাণীদের স্ব-ঔষধের একটা প্রমাণ। ওজুগা প্রকল্পে গ্যাবনের লোয়াঙ্গো ন্যাশনাল পার্ক ঘন জঙ্গল, সাভানা এবং উপকূল নিয়ে অবস্থিত, যেখানে প্রায় ৪৫ টা শিম্পাঞ্জির দল থাকে।
মাসকারো নামে একজন স্বেচ্ছাসেবক ওজুগা শিম্পাঞ্জিদের ভিডিও রেকর্ডিং করছিলেন, তখন তিনি দেখেন, সুজি নামে এক শিম্পাঞ্জি তার কিশোর ছেলে সিয়ার কাছে গেল। সিয়ার পায়ে একটি ক্ষত ছিল। সুজি ক্ষতটির দিকে তাকিয়ে মুখ থেকে কিছু বের করে আঘাতে লাগাতে লাগল। পরে ফুটেজ পর্যালোচনা করে, তার মনে হয়েছিল যে সুজি কাছাকাছি থেকে কিছু ধরেছিল। বিজ্ঞানীদের ভিডিওটি দেখে দলটির দিকে নজর রেখে দেখলেন, বিভিন্ন শিম্পাঞ্জি এটি করছে, কখনো নিজের ক্ষতস্থান সারাতে বা অন্য সঙ্গীর ক্ষত মেরামতে। ফুটেজের ওপর ভিত্তি করে, তারা দেখলেন, এই বস্তুটি এক ধরণের ছোট পোকা। ১৫ মাসের মধ্যে, তারা মোট ২২ বার এটি দেখেন। শিম্পাঞ্জিরা দলের সদস্যদের মধ্যে বা বহিরাগতদের সঙ্গে মারামারি করে, নিজেরা আহত হয়। প্রতিটি ক্ষতে শিম্পাঞ্জিরা একটি পোকা ধরে, পিষে বা তাদের ঠোঁটের মধ্যে রেখে, তারপর ক্ষতস্থানে একাধিকবার ঘষে ঘষে লাগায়। গবেষকরা কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে তাদের এই পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছেন।
এই আচরণটি অনেকটা নিজে ওষুধ প্রয়োগের মতো আচরণ। অনেক প্রাণী স্ব-ঔষধের জন্য পরিচিত। বন্য লাল এবং সবুজ ম্যাকাও হজমে সাহায্য করার জন্য কাদামাটি খায়। গর্ভবতী হাতি প্রসবের জন্য নির্দিষ্ট পাতা খায়। পাখিরা তাদের বাসায় ভেষজ বুননের মাধ্যমে পরজীবীদের তাড়াতে পারে। ওরাংওটাং-কে তাদের ত্বকে পাতা এবং লালা থেকে তৈরি একটি মলম ঘষতে দেখা গেছে। কিন্তু শিম্পাঞ্জিদের এর আগে খোলা ক্ষত নিরাময়ের জন্য পোকামাকড় দিয়ে স্ব-ওষুধ দিতে কেউ দেখেনি।
অন্য জায়গাতে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন শিম্পাঞ্জিরা ক্ষতস্থানে পাতাও লাগাচ্ছে। পাতার ক্ষেত্রে আশেপাশের নানা পাতা ব্যবহার করলেও, কী পোকা তারা ক্ষত নিরাময়ে ব্যবহার করছে, তা এখনও গবেষকরা বুঝতে পারেন নি। তবে এক্ষেত্রে একটি শিম্পাঞ্জি অন্যটির যত্ন নিচ্ছে, যা এই প্রাণীর সামাজিক আচরণের সাথে জড়িত। নিজের কোনো উপকার না করে অন্য ব্যক্তির উপকার করার জন্য কাজ করা, এই গবেষণার একটি আলোচিত বিষয়।