শহরের গঠন মানুষের মনে নানা ধরনের প্রভাব ফেলে, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষ শহরের কোন অঞ্চলে থাকে, তার ওপর তাদের বিভিন্ন জাতের প্রতি নিজস্ব কিছু মনোভাব তৈরি হয়। নেচার কমিউনিকেশনস-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের সামাজিক পরিসরে উন্মুক্ত হওয়া এবং তার সাথে মানিয়ে নেওয়া বা অভিযোজন ক্ষমতার ওপর একটি গাণিতিক মডেল উপস্থাপন করা হয়েছে। এই মডেলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কেন কিছু শহরে মানুষ বেশি অসচেতন, তাদের মধ্যে অন্তর্নিহিত, জাতিগত পক্ষপাত কেন দেখা যায়। গবেষকদের আশা স্থানীয় সম্প্রদায় এবং সরকারকে ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত শহর তৈরিতে সহায়তা করতে এই গবেষণার ফলাফল সাহায্য করতে পারে।
মনোবিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু স্টিয়ার, ইমপ্লিসিট অ্যাসোসিয়েশন টেস্ট (আইএটি) এর এক জনপ্রিয় অনলাইন পরীক্ষার ডাটাবেসের সাহায্য নিয়েছেন। এখানে স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণকারীদের কিছু ইতিবাচক বা নেতিবাচক শব্দ দিয়ে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে জোড়া মেলাতে দেওয়া হয়েছে। দেখা গেছে দ্রুততার সাথে তারা হয় ‘শ্বেতাঙ্গ’-এর সাথে ইতিবাচক শব্দ জোড়া মিলিয়েছে নয়তো ‘কৃষ্ণাঙ্গ’-এর সাথে ইতিবাচক শব্দ জোড়া মিলিয়েছে। অর্থাৎ তাদের মনে নিজের অজান্তে এই দুই বর্ণের ব্যক্তিদের মধ্যে কারোর প্রতি পক্ষপাত রয়েছে। মার্কিন শহরগুলি কীভাবে সংগঠিত হয়, যার থেকে জাতিগত পক্ষপাত উদ্ভূত হয় তা দেখতে গবেষকরা এই তথ্যের সাহায্য নিয়েছিলেন। মানুষ মনে করতে পারে যে তিনি পক্ষপাতদুষ্ট নন, কিন্তু অবচেতনভাবে তার একটা গোষ্ঠীর প্রতি পছন্দ এই পরীক্ষাতে প্রকাশ পায়।
এই ফলাফল থেকে মনে হয় শহরের কাঠামোগত কারণ মানুষকে জাতির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট করে বা তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। সম্ভবত এর সবচেয়ে প্রকট কারণ হল বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী বিভিন্ন এলাকায় বিভক্ত হয়ে বাস করে। এর সাথে এমন সর্বজনীন পরিসরের অভাব থাকে যেখানে মানুষের একে অপরের সাথে মেলামেশা করার, পরস্পরকে বোঝার যথেষ্ট সুযোগ পায়। এমন ধরনের শহর যেখানে মানুষ অন্য গোষ্ঠীর ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের সাথে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারে না, মেলামেশার অভাব থাকে, তখন মানুষের মনে জাতিগত পক্ষপাত তৈরি হয়। যা সামাজিক সাম্যের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা তৈরি করে। এই বাধাগুলো চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, পুলিশি ব্যবস্থা, মানসিক স্বাস্থ্যের ফলাফল এবং শারীরিক স্বাস্থ্য সহ জীবনের সমস্ত দিক জুড়ে বৈষম্য তৈরি করে।