পোকামাকড় যে কোন বাগানের গাছপালার দুঃস্বপ্ন। যেই গাছে তাজা কুঁড়ি আসে সাথে সাথে নানা পোকা মাকড় এফিড, বিটল, অন্যান্য বাগ সুস্বাদু খাবারের খোঁজে চলে আসে। গাছের ফলন নষ্ট হয়, কৃষকরা তখন পোকা তাড়াতে কৃত্রিম কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু বাগান এবং কৃষিজমিতে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত কীটনাশক মাটি জল, গাছপালা, বন্যপ্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রচুর ক্ষতি করে। কিছু কীটপতঙ্গও রাসায়নিকের প্রতিরোধী হয়ে উঠছে, তাই কৃষকদের কাছে কী ব্যবহার করতে হবে তার বিকল্প নেই।
ফসল রক্ষা এবং কীটনাশক ব্যবহার কমানোর আরেকটি প্রচলিত উপায় হল কৃষি জাল। বাগান বা সবজির ক্ষেতের পাশ দিয়ে গেলে সাধারণত সাদা, কালো বা নীল-জালযুক্ত গ্রিনহাউস দেখা যায়। বিছানায় মশারির মতো, এই জালগুলো পোকামাকড়কে ফসলে ঢুকতে বাধা দেয়। এই জালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল জালের গর্তের আকার। গর্ত যত ছোটো হবে, স্বাভাবিকভাবে পোকা তত কম হবে। কিয়োটো প্রিফেকচারাল এগ্রিকালচার, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফিশারিজ সেন্টার এবং ইউনিভার্সিটি অফ টোকিওর একটি গবেষণা দল দেখেছে যে জালের রঙও পোকা আটকানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করতে পারে। গবেষকরা পেঁয়াজ ক্ষেতে পেঁয়াজের থ্রিপস প্রতিরোধে লাল, সাদা, কালো এবং সংমিশ্রণ-রঙের জালের প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা করেছেন।
গবেষকরা লাল জাল বিছিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন, যার জালের গর্তের আকার পোকামাকড়ের দেহের চেয়ে বড়ো হলেও তা ছোট ছিদ্রযুক্ত অন্যান্য প্রচলিত রং যেমন কালো বা সাদা জালের চেয়ে পোকা আটকাতে বেশি কার্যকর হয়েছে। এই গবেষণায় কীটপতঙ্গকে দূরে রাখতে কীটপতঙ্গের রঙের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করা হয়েছে। বেশিরভাগ পোকামাকড়ের চোখে লাল ফোটোরিসেপ্টর থাকে না ফলে তাদের পক্ষে লাল রঙ দেখা কঠিন, তাই তাদের চোখে এই অদৃশ্য রঙ তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই গবেষণায় তাই ‘অপটিক্যাল পেস্ট কন্ট্রোল’ হিসেবে লালা রঙের জাল ব্যবহার করা হয়েছে। দেখা গেছে লাল জালে ঢাকা ক্ষেতে ২০-২৫% কম কীটনাশক লেগেছে। লাল রঙের কৃষি জালের ব্যবহার কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করতে পারে ফলে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কম পড়বে আর তা টেকসই এবং কার্যকর চাষ আবাদের সহায়ক হবে।