শিশুরা চঞ্চল হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব সময় অস্থির ভাব, কোনও কথা শুনতে না চাওয়া, সামান্য কাজও শেষ করতে না পারা, অনর্গল কথা বলার মতো প্রবণতা দীর্ঘ দিন ধরে চললে বিষয়টি ভাবনার। হতে পারে ওই শিশু ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভ ডিসঅর্ডার’ (এডিএইচডি)-এর শিকার। এডিএইচডি-র মূল সমস্যা হল মনোযোগের অভাব এবং অসম্ভব অস্থিরতা। সম্প্রতি নেচার মেন্টাল হেলথ-এ প্রকাশিত এক গবেষণায়, গবেষকের দল দেখিয়েছে যে এডিএইচডি আক্রান্ত প্রতি দুজন শিশুর মধ্যে একজনের মানসিক অস্থিরতার বা আবেগ নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা দেখা যায়। সাধারণত, নির্ধারিত ওষুধও চিকিত্সার ক্ষেত্রে কম কার্যকর বলে মনে করা হয়। আঠেরো বছরের কম বয়সী প্রতি ১৪ জনের মধ্যে একজন এডিএইচডির দ্বারা আক্রান্ত এবং প্রায় অর্ধেকের ক্ষেত্রে এটি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেও থেকে যায়। এই অবস্থার কারণে সর্বদা অসম্ভব অস্থিরতা, মনোযোগে অসুবিধা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে এডিএইচডি আক্রান্ত বেশ কিছু শিশুদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ সমস্যা রয়েছে, ফলত তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রভাবিত হয়। যেমন, এডিএইচডি আক্রান্ত প্রতি ৫০ জন শিশুর মধ্যে একজনের অবসাদ বা মানসিক ব্যাধি, আবার প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের উদ্বেগজনিত সমস্যা থাকতে পারে। অনেকেই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা বলেই চিৎকার চেঁচামেচি করে বা প্রচণ্ড অস্থির হয়ে পড়ে। আগে ভাবা হত যে এই সমস্যাগুলো এডিএইচডি-র সাথে যুক্ত অন্যান্য উপসর্গের ফলে ঘটছে কিন্তু এই গবেষণা থেকে দেখা যায় যে আবেগ নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতা এডিএইচডি আক্রান্তদের মধ্যে স্বাধীনভাবে ঘটে। গবেষকরা কিছু অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের ইমেজিং-এর তথ্য পরীক্ষা করেন। তারা দেখেন, যে সব শিশুদের বেশি মাত্রায় এডিএইচডি এবং আবেগজনিত সমস্যা ছিল তাদের পার্স অরবিটালিস নামে মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল আকারে ছোটো ছিল। পার্স অরবিটালিস মস্তিষ্কের সামনের দিকে অবস্থিত এবং আবেগ ও কথোপকথন বোঝা এবং প্রক্রিয়াকরণের পাশাপাশি আচরণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং মস্তিষ্কের এই অংশটি এডিএইচডিতে আক্রান্তদের আচরণগত বৈশিষ্ট্যের ব্যাখ্যা প্রদান করে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক বারবারা সাহাকিয়ানের মতে পার্স অরবিটালিস মস্তিষ্কের এমন একটি সংযুক্ত অংশ যা সঠিকভাবে বিকশিত না হলে শিশুরা আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক পরিস্থিতিতে অন্যদের সাথে যথাযথভাবে যোগাযোগ করতে পারেনা। এডিএইচডি আক্রান্তরা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। গবেষকরা আশা করেন যদি এই বৈশিষ্ট্যকে আমরা স্বীকার করি তবে শিশুরা যে সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায় তা আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে। ফলত আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আচরণগত থেরাপি বা কার্যকর চিকিত্সা ব্যবহার করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা যাবে।