কোনো চিকিত্সক চান না তার রোগী অস্ত্রোপচারের সময় জেগে উঠুক- এমনকি রোগীরাও চান না। তাই অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা প্রায়শই অস্ত্রোপচারের সময় বা ভেন্টিলেটরের মতো জীবন রক্ষাকারী মেশিনে রোগীদের ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ওষুধ দেন। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ডেভিড মিন্টজ মনে করেন কখনও কখনও রোগীকে অ্যানেস্থেটিক অতিরিক্ত পরিমাণে দিলে ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন বয়স্ক ব্যক্তি যারা স্মৃতিভ্রংশ বা বয়সজনিত কারণে মস্তিষ্কের রোগে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পরে বিভ্রান্তির ঝুঁকি উচ্চ মাত্রায় থাকতে পারে। গবেষণায় আরও জানা গেছে যে দীর্ঘ সময়ের জন্য অ্যানেস্থেটিক ব্যবহারের কারণে ছোটো বাচ্চাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা হতে পারে। তাই পরিমাণে কম ব্যবহার করাই শ্রেয়।
একটি স্বয়ংক্রিয় অ্যানেস্থেসিয়া বিতরণ ব্যবস্থা ডাক্তারদের সঠিক ওষুধের ডোজ দিতে সহায়তা করতে পারে। নতুন এই যন্ত্রটি বানরের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ নিরীক্ষণ করে প্রোপোফোল নামক একটি সাধারণ অ্যানেস্থেটিক সরবরাহ করে যা প্রতি ২০ সেকেন্ডে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। ওষুধের পরিমাণের মাত্রা বা ডোজ নিশ্চিত করেছে যে প্রাণীরা পর্যাপ্ত ওষুধ পাচ্ছে যা পরিমাণে খুব বেশি বা খুব কম নয় এবং তা ১২৫ মিনিটের জন্য ঘুমিয়ে থাকার জন্য যথেষ্ট। গবেষণাটি পিএনএএস নেক্সাসে প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণত, অ্যানেস্থেটিকের পরিমাণ শরীরের পরিমাপের উপর ভিত্তি করে- যেমন ওজন এবং বয়স। কিন্তু এই হিসাব নিখুঁত নয়। মিন্টজের মতে অ্যানেস্থেটিকের ডোজ এবং রোগীদের প্রোপোফোল বা অনুরূপ ওষুধ দেওয়ার ফলে সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞান হওয়ার সম্ভাবনার মধ্যে কোনও স্পষ্ট সম্পর্ক নেই । তাই অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা তাদের রোগীদের অজ্ঞান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে একটু বেশি পরিমাণে ওষুধ দিয়ে থাকেন। রোগীদের অ্যানেস্থেশিয়ার কারণে জ্ঞানহীন অবস্থায় থাকাকালীন, চিকিত্সকরা শ্বাস-প্রশ্বাসের হার এবং হৃদস্পন্দনের মতো পরোক্ষ মার্কারের উপর নজর রাখেন। প্রোপোফলের মতো অ্যানাস্থেটিক মস্তিষ্কের তরঙ্গকেও পরিবর্তন করে, তাই মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ট্র্যাক করা অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের রোগীর সচেতনতার উপর নজর রাখতে সাহায্য করে। ব্রাউন এবং গবেষক সহকর্মীরা অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের জন্য সেই কাজটি করার জন্য একটি যন্ত্র তৈরি করেন। যন্ত্রটিতে সীমিতভাবে মানুষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, তার বদলে একটা কম্পিউটারের সাথে মস্তিষ্ক-মনিটরিং চিকিৎসা সরঞ্জামগুলোকে সংযুক্ত করা হয় যা শরীরে প্রোপোফোলের প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করতে অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। প্রতি ২০ সেকেন্ডে, মেশিনটি গণনা করে মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের একটি পূর্বনির্ধারিত স্তর বজায় রাখার জন্য ঠিক কত পরিমাণে ওষুধের প্রয়োজন।
পরবর্তী পদক্ষেপে যন্ত্রটি পরিমার্জিত করে এবং মস্তিষ্কের পর্যবেক্ষণের পদক্ষেপগুলো নিয়ন্ত্রিত করে আরও প্রাণীর সাথে পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করা প্রয়োজন। এই অধ্যয়নের ক্ষেত্রে ডিভাইসটি ইলেক্ট্রোডের সাহায্যে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিমাপ করেছে যা সরাসরি বানরের মস্তিষ্কে রোপণ করা হয়েছিল। গবেষকদের লক্ষ্য হল পরবর্তী স্তরে মাথার ত্বকের সাথে সংযুক্ত ইইজি ইলেক্ট্রোড ব্যবহারে নিয়ে যাওয়া। চেতনা সংজ্ঞায়িত করা কঠিন, এবং ইইজি-ও একটি নিখুঁত হাতিয়ার নয়। কারণ, মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইইজি সুস্থ মস্তিষ্কের লোকেদের ইইজি থেকে কিছুটা আলাদা। তবুও আশার কথা, অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের সজাগ দৃষ্টির সাথে প্রযুক্তির সংমিশ্রণে সমস্যার সমাধান হতে পারে।