প্রেসবায়োপিয়া, বিশ্বব্যাপী এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা, যা বয়সকালে বেশ সাধারণ চোখের অসুখ। প্রেসবায়োপিয়ায় বার্ধক্যের ফলে চোখের প্রতিসরণকারী ত্রুটি ঘটে যা মধ্যবয়সী এবং বয়স্কদের কাছের জিনিস দেখা কঠিন করে তোলে। এর কারণ হল চোখের লেন্স, অর্থাৎ যে আভ্যন্তরীণ অংশ চোখকে ফোকাস করতে সহায়তা করে তা রেটিনার ওপর সঠিকভাবে আলো ফোকাস করতে পারেনা। এর ফলে কিছু পড়তে গেলে তা বেশ দূরে ধরে দেখতে হয়, সেলাই করার জন্য ছুঁচে সুতো পরানো বেশ কঠিন হয়, এছাড়া চোখে চাপ পড়ে, মাথা ব্যথা হতে পারে। বছর পঁয়তাল্লিশ হয়ে যাওয়ার পর এটা সব মানুষের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রিডিং গ্লাস বা পড়ার চশমা নিলে কাছের জিনিস সহজে দেখা যায়। এই চশমার জন্য আলাদা কোনো প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন পড়েনা। এই চশমা বেশ সস্তা, চশমার দোকানে বেশ সহজলভ্য। তবে অনেক উন্নয়নশীল দেশে সাধারণ মানুষের কাছে এর বিশেষ প্রচলন নেই।
একদল আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যকর্মী, চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং সমাজবিজ্ঞানীরা রিপোর্ট করেছেন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রেসবায়োপিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের রিডিং গ্লাস বা পড়ার চশমা দিলে তা তাদের আয় বাড়িয়ে তুলতে পারে। ওপেন-অ্যাক্সেস জার্নাল PLOS ONE-এ প্রকাশিত গবেষণায় তারা জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশের ৫৬টা গ্রামের কয়েকশ মানুষকে পড়ার চশমা দিয়েছেন। এর আগে কোনো গবেষণায় আয়ের উপর প্রেসবায়োপিয়ার প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়নি।
গবেষণায় বলা হয়েছিল প্রেসবায়োপিয়া-র জন্য কাছে দেখে যে সমস্ত কাজ করতে হয়, তাতে মানুষ অসুবিধার সম্মুখীন হয়। যেমন ছুঁচ সুতো ব্যবহার করে সেলাই করা, ধানের তুষ ঝাড়াই, চা পাতা তোলা। এর ফলে উপার্জন কমতে পারে। গবেষকরা বাংলাদেশের ৫৬টা গ্রামে গিয়ে ৮০০ জন ব্যক্তি খুঁজে পেয়েছেন যাদের প্রেসবায়োপিয়া ছিল। এদের মধ্যে ৪০০ জন ব্যক্তিকে তারা তখনই চশমা দিয়েছিলেন। বাকিদের আটমাস পরে চশমা দিয়েছিলেন। তারা দেখেন এই দলের উপার্জন ৩৮% বেড়ে গিয়েছিল। তাদের মাসিক আয় ৩৫ ডলার থেকে বেড়ে ৪৭ ডলার হয়েছিল। তারা এও দেখেছেন যারা কাজ করতে পারতেন না, তারা আবার কাজ শুরু করতে পেরেছিলেন। আর চশমার দাম ধরা হলে তা মার্কিন মুদ্রায় মাত্র ৩ বা ৪ ডলার। মাত্র এই টাকার বিনিময়ে বিরাট সংখ্যক মানুষের জীবনের গুণমান উন্নত হতে পারে।