ব্যায়ম করার পর বা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের পর আমাদের শরীর প্রায়শই গরম এবং ঘামে ভিজে যায় – কিন্তু খানিকক্ষণ পরই আমরা আবার ঠান্ডা অনুভব করতে শুরু করি। আবার কোনো কোনো গ্রীষ্মের রাতে গরমে ঘুমোতে অসুবিধা হলে আমরা প্রায়ই চাদর সরিয়ে দিয়ে থাকি। ঘাম শরীর ঠাণ্ডা করার এক বিশেষ উপাদান যার সাহায্যে শরীরের তাপ মুক্ত হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেকসময় দেখা যায় যে আমাদের সারা শরীর ঘামে ভিজে যায় আর আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। এই ঘটনাটি খুব স্বাভাবিক নয়।
রাতে ঘুমের মাঝে সারা শরীর ঘামে ভিজে যাওয়া অনেকের ক্ষেত্রেই বারংবার ঘটে থাকে এবং এটি অনেকের জীবনের একটি অপ্রীতিকর অংশ। এর পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। মস্তিষ্কে অবস্থিত হাইপোথ্যালামাস শরীরের এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের অংশ এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। এটিতে তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীল সেন্সর রয়েছে যা কেন্দ্রীয়ভাবে অবস্থিত স্নায়ু কোষ বা থার্মোরিসেপ্টর, অঙ্গপ্রতঙ্গ এবং ত্বক থেকে তথ্য গ্রহণ করে। এই থার্মোরিসেপ্টর শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তন শনাক্ত করে, হাইপোথ্যালামাসে সংকেত পাঠায়। এই সংকেতগুলো শরীরকে শীতল করার জন্য ঘাম নিঃসরণ করে বা শরীরকে উষ্ণ করার জন্য কম্পনের সৃষ্টি করে। বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে, যে কোনো ব্যক্তির রাতে খুব বেশি পরিমাণে ঘাম হতে পারে। কিন্তু পুরুষদের তুলনায় এই ঘটনা মহিলাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়, এবং এর মূল কারণ মেনোপজ এবং এর সাথে সম্পর্কিত হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত ঘাম রাতের বেলাতেই বেশি হয় এবং শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রার পরিবর্তন নোরপাইনফ্রাইন এবং সেরোটোনিন স্তরকে প্রভাবিত করে বলে মনে করা হয়। এই দুটি নিউরোট্রান্সমিটার হাইপোথ্যালামাসে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও হরমোন রাতেরবেলায় ঘাম হওয়াকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে যাদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকে। ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রায় ৩৮% পুরুষদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম থাকে তবে এটি যে কোনও বয়সে পুরুষদের প্রভাবিত করতে পারে।
অনেকসময় সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে, আমাদের শরীরের তাপমাত্রা প্রায়শই বেড়ে যায়। ঘাম শরীরকে ঠান্ডা করে এবং শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিউপটেক ইনহিবিটরস (এসএসআরআই), কর্টিকোস্টেরয়েড, থাইরয়েড হরমোন প্রতিস্থাপন এবং মেথাডোনের মতো ওষুধও রাতে ঘামের কারণ হতে পারে। এই ওষুধগুলো মস্তিষ্ক এবং নিউরোট্রান্সমিটারকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও যে সমস্ত ব্যক্তিরা উৎকণ্ঠায় ভোগে তাদের রাতের বেলা ঘাম বেশি পরিমাণে হয়। ঘুম সংক্রান্ত ব্যাধি যেমন অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া, যেখানে ঘুমের সময় শ্বাসনালী বারবার বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যক্তিটি জোরে নাক ডাকে তাদের ক্ষেত্রে রাতে ঘাম হয়। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ নিয়মিত রাতেরবেলায় ঘেমে যান। সঠিক কারণ অনির্ধারিত থাকলেও গবেষণা থেকে জানা গেছে যে রক্তে নিম্ন অক্সিজেনের মাত্রা (হাইপক্সেমিয়া) এবং/অথবা উচ্চ রক্তচাপ এর কারণ হতে পারে। আবার যে সব ব্যক্তিরা অতিরিক্ত ব্যায়ম করেন তাদের রাতের বেলা ঘাম হতে পারে। অতিরিক্ত ব্যায়াম থাইরয়েডকে উদ্দীপিত করতে পারে, ব্যাসাল মেটাবলিক রেট এবং শরীরের তাপমাত্রা ব্যায়াম করার ১৪ ঘন্টা পরেও বেশি থাকতে পারে। যদি নিয়মিত রাতে ঘাম হয়, ও তা বিরক্তির উদ্রেক করে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় বা ক্লান্ত করে দেয় বা ওজন হ্রাসের মতো উপসর্গের সৃষ্টি করে যা জীবনযাত্রা বা খাদ্য পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত নয়, তবে এর কারণ নির্ধারণের জন্য একজন ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন।