রাতে শোবার সময় আমরা বেশিভাগই আলো নিভিয়ে ঘুমোই, কৃত্রিম আলো আমাদের স্বাভাবিক ঘুমের ধরনকে ব্যাহত করে। আমরা কখনও ভেবে দেখেছি, গাছের উপর রাস্তার আলোর বা আলোকসজ্জার কী প্রভাব পড়ে? রাস্তার আলো মানুষকে নিরাপদে রাতে বাড়ি পৌঁছতে সাহায্য করলেও ভাবার বিষয় হল শক্তিশালী রাতের আলো একটি গাছের জৈবিক ঘড়িকে প্রভাবিত করতে পারে, সম্ভাব্যভাবে তাদের পরিচিত দিবা-রাত্রির চক্রকে ব্যাহত করে। গাছেরা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে শক্তি পায় আর এই প্রক্রিয়ার জন্য যেমন নির্দিষ্ট পরিমাণে সূর্যালোকের প্রয়োজন তেমনই অন্ধকারের সময়কাল সমান গুরুত্বপূর্ণ। কৃত্রিম আলো গাছের জৈবিক ঘড়িকেও প্রভাবিত করে ফলে তার ফুল ফোটার সময় পরিবর্তিত হয়, ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে সুপ্ততা রোধ হতে পারে।
কৃত্রিম আলো গাছের বার্ষিক বৃদ্ধি এবং প্রজনন চক্র সহ গাছের জৈবিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এই প্রক্রিয়াগুলো সাধারণত দিনের দৈর্ঘ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ রাতে যখন গাছগুলো কৃত্রিম আলোর সংস্পর্শে আসে, তখন তাদের চক্রকে প্রভাবিত করে। সালোকসংশ্লেষণ সম্পন্ন করার জন্য, গাছের দৃশ্যমান নীল এবং লাল আলো প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম আলো ব্যবহার করতে পারে। অতএব, কৃত্রিম আলো এটিকে খুব বেশি বা একেবারেই প্রভাবিত করে না যা প্রভাবিত করে তা হল দিনের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন। অনেক ধরনের গাছ দিনের দৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল। যখন একটি গাছ সারাদিন আলোর সম্মুখীন হয়, তখন এটি উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং প্রজনন ক্রিয়াকলাপ উভয়ই পরিবর্তন করতে পারে। সারা দিন ও রাত ধরে আলোর ঝলকানি থাকলে তার সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পরে। কারণ ক্রমাগত আলোর কারণে কিছু গাছ বাড়তে থাকে কিন্তু সেসময় তাদের সুপ্তাবস্থায় চলে যাওয়ার কথা, এমন একটি অবস্থা যা তাদেরকে শীতের ঠান্ডা থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। এটি বিশেষত নতুন ছোটো গাছের জন্য বিপদের কারণ। তাদের প্রাণশক্তি তাদের স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হতে দেয়, ফলে প্রাপ্তবয়স্ক গাছের চেয়ে ঠান্ডায় আঘাত পায় বেশি। গাছের উপর আলো দূষণের প্রভাব জেনে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কৃত্রিম গাছের আলো বন্ধ করা প্রয়োজন। উচ্চ-চাপের সোডিয়াম ল্যাম্প এবং কম-তীব্রতার জ্বলজ্বলে ঝকমকে আলো উভয়ই এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ তাদের মধ্যে ইনফ্রারেড আলোর রশ্মি রয়েছে যা কিছু গাছকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। উদ্ভিদকে ঘিরে জীববৈচিত্র রয়েছে, সেখানে রাতের আলোয় ক্ষতি হয় জীবজগতের। পাখি, কীটপতঙ্গের শারীরবৃত্তীয় ও জৈবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয়। আলোয় যে কৃত্রিম তাপ উৎপন্ন হয়, তাতেও বহু কীটপতঙ্গ মারা যায়। এটা চিন্তার বিষয়। কারণ, এই ক্ষতি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে।