কথায় কথায়, কারণে-অকারণে মাথাগরম হয়ে যাওয়া বা রাগের মাথায় ভুলভাল কাজকর্ম করে ফেলা, অথবা রাগ করে অন্যদের কথা শোনানো- এই পরিস্থিতি অনেকেরই ঘটে। কখনও আবার পরিস্থিতি এতটাই হাতের বাইরে চলে যায় যে, রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না? রাগ সকলেরই হয় তবে সেই রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে আখেরে কিন্তু ক্ষতি আপনারই। রাগের চোটে বহু কাজ পণ্ড হয়ে যায়, মানসিক চাপ বেড়ে যায়, বারোটা বাজে শরীরেরও।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি রিভিউ-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে রাগের বহিঃপ্রকাশ করে ফেললে সাময়িকভাবে ভালো লাগলেও রাগ কমাতে এই পদ্ধতি কার্যকর নয়। পরিবর্তে, স্ট্রেস বা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত কৌশল যেমন – গভীর শ্বাস নেওয়া, মননশীলতা, ধ্যান, যোগব্যায়াম অথবা ১০ পর্যন্ত গোনা – রাগ এবং আগ্রাসন কমাতে আরও কার্যকর। গবেষকরা ১০০০০-এরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে ১৫০টিরও বেশি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে রাগ কমানোর জন্য শারীরবৃত্তীয় উত্তেজনা কমানো প্রয়োজন। ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ব্র্যাড বুশম্যান বলেছেন রাগ কমানোর জন্য রাগ প্রকাশ করে ফেলা জরুরি- এই ভ্রান্ত ধারণা ত্যাগ করা গুরুত্বপূর্ণ। রাগ প্রকাশ করে ফেললে হালকা হওয়া যায় – কথাটি যুক্তিসঙ্গত মনে হলেও এই ক্যাথারসিস তত্ত্বকে সমর্থন করার জন্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। সুতরাং রাগ কমাতে, উত্তেজনার মাত্রা হ্রাস করে এমন ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। এমনকি বাইরে হাঁটতে বা জগিং করতে যাওয়াও কার্যকর কৌশল নয় কারণ এটি উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। মেটা-অ্যানালিটিক রিভিউ পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষকরা দেখতে চেয়েছেন রাগ নিয়ন্ত্ররণের ক্ষেত্রে কোনটা কার্যকারী – উত্তেজনা-বর্ধক কার্যকলাপ যেমন- কিকিং ব্যাগে আঘাত করা, জগিং, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা নাকি উত্তেজনা- হ্রাসকারী কার্যকলাপ যেমন- গভীর শ্বাস নেওয়া, মননশীলতা, ধ্যান, যোগব্যায়াম। গবেষণার ফলাফল দেখায় যে পরীক্ষাগারে বা তার বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, ব্যক্তি নির্বিশেষে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বা ব্যক্তিগত নির্দেশনার মাধ্যমে, দলগতভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে উত্তেজনা-হ্রাসকারী ক্রিয়াকলাপ ক্ষোভ প্রতিরোধে কার্যকর। উত্তেজনা-হ্রাসকারী কার্যকলাপ যা রাগ বা ক্ষোভ কমাতে সক্ষম তার মধ্যে রয়েছে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, নিজেকে শিথিল করা, মননশীলতা, ধ্যান, যোগব্যায়াম, ধীরে ধীরে শরীরের পেশির শিথিলকরণ, শরীরের মধ্যচ্ছদা ব্যবহার করে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া প্রভৃতি। আজকের সমাজে, আমরা সবাই প্রতিনিয়ত বিভিন্নধরনের চাপ বা স্ট্রেসের মোকাবিলা করছি, এবং আমাদের এর সাথে লড়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এই গবেষণা দেখায়, যে প্রকৌশলগুলো স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে তা অন্যদিকে রাগ বা ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণেও সমান কার্যকারী। গবেষকদের মতে কিছু শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যা উত্তেজনা বাড়ায় তা আমাদের হার্টের জন্য ভালো হতে পারে, তবে সেগুলো রাগ কমানোর সেরা উপায় নয়। এটি সত্যিই একটি যুদ্ধ কারণ রাগী ব্যক্তিরা চায় রাগ বের করে দিতে কিন্তু গবেষণা প্রমাণ করে যে রাগ প্রকাশ করলে তা আগ্রাসনকে বৃদ্ধি করে।