পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় অর্ধেক জুড়ে রয়েছে ফেল্ডস্পার। এই শিলা-গঠনকারী টেকটোসিলিকেট খনিজসমূহের গ্রুপের দ্বারা পৃথিবীর মহাদেশীয় ভূত্বকের প্রায় ৪১% গঠিত। পৃথিবীতে যত্রতত্র খুঁজে পাওয়া এই যায় এই খনিজ, উপাদান হিসেবে পাওয়া যায় অন্যান্য গ্রহতেও। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে, ফেল্ডস্পার আশ্চর্যজনকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফেল্ডস্পারের ক্ষুদ্র বায়ুবাহিত কণা সঠিক অবস্থার প্রেক্ষিতে মেঘ গঠনকে প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু কীভাবে এটি ঘটে, তা স্পষ্ট নয়। এই প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে সেই রহস্যের সমাধান করেছে সম্প্রতি এক নতুন গবেষণা।
বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরে, জলের অণু বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকা ফেল্ডস্পারের ক্ষুদ্র কণার সাথে সংযুক্ত হয় এবং জমাট বাধতে শুরু করে, অবশেষে মেঘের বীজ বপন হয়। এই নতুন গবেষণায়, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির (টিইউ ওয়েইন) একটি গবেষণা দল আরো খুঁটিয়ে বিষয়টি দেখার জন্য একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল পারমাণবিক শক্তি মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করেছেন। টিইউ ওয়েইনের পদার্থবিদ গিয়াদা ফ্রান্সেচি বলেন তারা উচ্চ রেজোলিউশনযুক্ত অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ভ্যাকুয়াম চেম্বারে ফেল্ডস্পারের একটি টুকরো রেখে তা ভাগ করে তার পৃষ্ঠ দেখার চেষ্টা করেছিলেন। ছবিতে তারা ফেল্ডস্পার পৃষ্ঠের অদ্ভুত জ্যামিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এই খনিজের অভ্যন্তরে রয়েছে জলের ক্ষুদ্র পকেট বা “ইনক্লুশনস”। দেখা গেছে যখন শিলা বিভক্ত হয়ে যায়, তখন এই পকেট থেকে অল্প পরিমাণ জলীয় বাষ্প বের হয় এবং তা পৃষ্ঠের সাথে সংযুক্ত হয়। এই সংযুক্তি এবং শিলা বিভক্ত হওয়ার ফলে নির্গত শক্তি জলের অণুকে হাইড্রোক্সিল গ্রুপে (OH) ভেঙে দেয়। এবং এই হাইড্রক্সিল গ্রুপগুলোই জল এবং ফেল্ডস্পারের মধ্যে আকর্ষণের চাবিকাঠি: কারণ এই হাইড্রক্সিল গ্রুপগুলো জলের অণুর সাথে নিজেদের সংযুক্ত করার নিখুঁত কেন্দ্র। এই রাসায়নিক বন্ধন যেমন তাড়াতাড়ি ঘটে তেমনই এর স্থিতিশীলতা অনেক বেশি। আর ফেল্ডস্পার থেকে এই হাইড্রক্সিল গ্রুপ অপসারণ করতে, উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োজন।