নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের জল স্তর বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উপকূলীয় জলাভূমি এবং প্রবাল প্রাচীর দ্বীপগুলো দ্রুত প্রসারিত হতে পারছে না। টুলেন ইউনিভার্সিটির এক গবেষক সহ গবেষকদের একটি দল বলেন যে এই অরক্ষিত উপকূলীয় অঞ্চলের বেঁচে থাকার জন্য প্যারিস চুক্তিতে বর্ণিত বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি, ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা ৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নীচে সীমাবদ্ধ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তারা দেখেন যে প্রতি বছর সমুদ্র-স্তর ৭ মিলিমিটারের বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষকরা দেখেছেন যে যদি প্রাক-শিল্প তাপমাত্রার তুলনায় বিশ্ব উষ্ণায়ণ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে থাকে তবে ২১০০ সাল অবধি এই উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রকে সম্ভবত বাঁচিয়ে রাখা যাবে, কিন্তু এই উষ্ণায়ণ যদি আরও বৃদ্ধি পায় তবে এই বাস্তুতন্ত্র ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ১৭০০০ বছর আগে সমুদ্রের জলস্তর আজকের তুলনায় ১২০মিটার নীচে ছিল। কিন্তু বরফ যুগ শেষ হওয়ার পর প্রতি একশো বছরে সমুদ্রের জল স্তর ১ মিটার করে বেড়েছে। এর ফলে উপকূলীয় আবাসস্থলের বিশাল অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পুনরুদ্ধারের জন্য হাজার হাজার বছর লেগেছে। প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা থেকে উষ্ণতার মাত্রা বেড়ে গেলে দ্রুত সমুদ্রের জলস্তরের বৃদ্ধি ঘটবে এবং উপকূলীয় অঞ্চলের পশ্চাদপসরণ আবার ঘটবে। এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন ম্যাককুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল। তারা আরও বলেন যে উপকূলীয় অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ, জলাভূমি, প্রবাল প্রাচীর এবং প্রবাল দ্বীপ শুধু উপকূলরেখা রক্ষা করছে তাই নয় বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করছে, ছোটো ছোটো মাছেদের লালন-পালন করছে এবং লক্ষ লক্ষ উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারীদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে। ম্যানগ্রোভ গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়, প্রধানত বাংলাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, নিরক্ষীয় আফ্রিকা এবং নিম্ন-অক্ষাংশ আমেরিকায়। আরও দক্ষিণে রয়েছে ছোটো ছোটো ম্যানগ্রোভ অরণ্য-যেমন সিডনির অলিম্পিক পার্ক বা বোটানি বে-র টাওরা পয়েন্ট, যা রামসার কনভেনশনের অধীনে আন্তর্জাতিকভাবে উল্লেখযোগ্য হিসাবে তালিকাভুক্ত। নিরক্ষরেখা থেকে আরও দূরে ইন্টার-টাইডাল অঞ্চলে উপকূলীয় জলাভূমি বেড়ে ওঠে, যেমন উত্তর আমেরিকা এবং উত্তর ইউরোপের আটলান্টিক উপকূলে। অস্ট্রেলিয়ায় এক মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি উপকূলীয় জলাভূমি রয়েছে।
ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং জলাভূমি সমুদ্র এবং ভূমির মধ্যে একটি বাফার হিসাবে কাজ করে – সমুদ্রের জলচ্ছ্বাসের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করে, ক্ষয় রোধ করে এবং মৎস্য ও উপকূলীয় উদ্ভিদের জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে কার্বনের প্রধান সিঙ্ক হিসাবে কাজ করে। ম্যানগ্রোভ এবং জলাভূমির সমুদ্রের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কিছু নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। তারা পলল জমা করে এবং ধীরে ধীরে সমুদ্র থেকে পিছিয়ে আসছে। কিন্তু এই পদ্ধতি বেশি দিন চলবে না। এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। সমুদ্রের জল স্তর বৃদ্ধি বা সমুদ্রের সম্প্রসারণের কারণে এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য আর জলাভূমি সমুদ্রের দিক থেকে পশ্চাদপসরণ করতে পারবে না ভূমি উন্নয়ন এবং মানুষের বাসস্থানের কারণে।