স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিবর্তনের গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল কেন এদের মধ্যে অনেকের মুখের আকার একটু লম্বা গোছের? প্রশ্নটা একটু অদ্ভুত হলেও গবেষকরা মনে করেন, যে সব প্রাণীদের দেহের আকার বড়ো তাদের মুখও লম্বা। বিজ্ঞানীরা এই প্রভাবটিকে “ক্র্যানিওফেসিয়াল ইভোলুশনারি অ্যালোমেট্রি” বা CREA বলে থাকেন। এটি বিড়াল, ইঁদুর, হরিণ, ক্যাঙ্গারু এবং কিছু বানর জাতীয় স্তন্যপায়ী গোষ্ঠীতে দেখা গেছে। আপনি যদি একটি গোরুর সাথে একটি ভেড়ার মুখের তুলনা করেন, অথবা উত্তর আমেরিকায় দেখতে পাওয়া বিশালাকার মুজের (হরিণ প্রজাতি) সাথে একটি ছোটো হরিণের মুখের তুলনা করেন তাহলে আপনি CREA-কে কার্যকরভাবে দেখতে পাবেন। এত সাধারণ হওয়া সত্ত্বেও CREA-র ব্যাখ্যা সে রকমভাবে নেই বললেই চলে। অনেক গবেষক মনে করেন CREA প্যাটার্নটি মাথার খুলির বিকাশের একটি সহজাত অংশ হতে পারে, যেখানে প্রাণীর বৃদ্ধির সাথে সাথে একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর মুখ স্বয়ংক্রিয়ভাবে লম্বা হয়। কিন্তু অনেক প্রাণীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে CREA প্যাটার্ন অনুসরণ করে না বা ঠিক তার উল্টো হয়। যেমন সামুদ্রিক ওটার বা ভোঁদড় জাতীয় প্রাণীদের দেহের আকার বড়ো হলেও মুখ ছোটো অন্যদিকে ফুলের রেণু সেবনকারী বাদুড় আকারে ছোটো কিন্তু এদের মুখের আকার লম্বাটে। তাই এটা স্পষ্ট যে একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর বড়ো শরীরের আকার হলেও সবসময় তাদের মুখ লম্বা হয়না।
গবেষকদের মতে প্রাণীরা খাওয়ার জন্য তাদের মুখ কীভাবে ব্যবহার করে তার মধ্যেই হয়তো উত্তর লুকিয়ে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভেড়া ও গোরু দুজনেই ঘাস খায় কিন্ত যেহেতু ভেড়া সামগ্রিকভাবে আকারে ছোটো, তাই কিছু কামড়াতে হলে তাদের চোয়াল, চোয়ালের পেশি এবং দাঁত যা তাদের মুখের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে তা দিয়ে জোরে কামড়াতে হয়। গবেষকদের মতে ছোটো মুখের প্রাণীরা জোরে কামড় দিতে পারে কারণ তাদের চোয়ালের পেশি এবং দাঁতের মধ্যে দূরত্ব ছোটো। এখন প্রশ্ন হল যদি ছোটো মুখের প্রাণীরা এত সহজে জোরে কামড়াতে পারে তবে বড়ো স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মুখ লম্বা কেন? গবেষকরা মনে করেন যে বড়ো প্রাণীদের স্বাভাবিকভাবেই বড়ো পেশি থাকে এবং তারা আরও সহজে কামড় দিতে পারে। তারা কোনো কিছু কামড়াতে কম পরিশ্রম করে। অর্থাৎ বৃহত্তর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের লম্বা মাথার খুলির কারণে তারা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সুবিধা পায়। তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে, লম্বা মুখের কারণে তারা উঁচু গাছের পাতায় পৌঁছাতে পারে বা মুখ ভর্তি খাবার গ্রহণ করতে পারে। মাংসাশী প্রাণীদের ক্ষেত্রে, দাঁতের গঠনের কারণে লম্বা মুখ প্রয়োজন আর তাছাড়া তারা খুব দ্রুত নিজেদের চোয়াল বন্ধ করতে সক্ষম। আবার বিপরীতও ঘটে। যেমন নেকড়ে শেয়ালের থেকে আকারে বড়ো হলেও তাদের মুখ শেয়ালের চেয়ে ছোটো। এর কারণ নেকড়ে বড়ো প্রাণী শিকার করে, এবং তাই তাদের কামড় অনেক শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। মানুষের ক্ষেত্রে চিত্রটা অন্যরকম। আমাদের বিশাল মাথার খুলির তুলনায় আমাদের মুখ ছোটো। এর কারণ আমরা খাদ্য অর্জনের জন্য আমাদের মুখ ব্যবহার করি না বরং আমাদের হাত, বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং রান্না করার ক্ষমতা ব্যবহার করে কাজ করি।