পৃথিবী জুড়ে অসুখের ধরণ বদলাচ্ছে। একদিকে অসংক্রামক ব্যাধির দুরন্ত পথচলার সামনে পড়ে সারাবিশ্বে ত্রাহি ত্রাহি রব। ডায়াবেটিস, প্রেসারের অসুখ, ক্যান্সার প্রভৃতি আগে যেগুলো বড় লোকেদের রোগ বলে ভাবা হতো, তা এখন গরীব-বড়লোক সবার উপরে সমানভাবে স্টীম রোলার চালাচ্ছে। তারই পাশাপাশি সংক্রামক অসুখের চরিত্রও পাল্টাচ্ছে। বড় হয়ে এসে পড়ছে নতুন নতুন সংক্রমণ। কখনও পুরনো জীবাণু নতুন রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। করোনা-তো হালফিল এভাবেই কাঁপিয়ে গেছে। এই বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে ৮ই মে ‘নেচার’ পত্রিকায়। আমেরিকার ইনস্টিটিউট অফ নোতরদাম এর মাইকেল মাহন ও সহকর্মীরা মেটা অ্যানালিসিস পদ্ধতিতে সারা পৃথিবীজোড়া ৩০০০ ডেটাসেট বিশ্লেষণ করে এক চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তারা দেখিয়েছেন যে মানুষেরই কর্মফলেই পরিবর্তিত এ বিশ্বের কিছু বিশেষ দিক এই জীবাণুর পরিবর্তনের এবং রোগের প্রকৃতির পরিবর্তনের জন্য দায়ী। জীব বৈচিত্র যত কমছে, জলবায়ুর পরিবর্তন যত বাড়ছে- নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব তত বেশী হচ্ছে। তারা দেখেছেন যে উষ্ণায়নের সাথে সাথে আফ্রিকাতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। এর উপরে রাসায়নিক ঘটিত দূষণ, নতুন নতুন প্রাণীর প্রকৃতিতে আবির্ভাব ও অন্তর্ধান এবং তাদের বাসস্থানের পরিবর্তন- এই বিষয়গুলিও গুরুত্বপূর্ণ। রবি ঠাকুর বহু আগে “হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী” নিয়ে পরিতাপ করেছিলেন। হিংসায় তো মানুষ দৃশ্যতই মারা পড়ে- এখনও তা প্রতিদিনই চলছে পৃথিবী জুড়ে।
কিন্তু আরো দ্রুত, আরো ধনী হতে গিয়ে প্রকৃতি লুণ্ঠন এবং প্রকৃতির উপর মাতব্বরি করতে গিয়ে গুহা ছেড়ে বেরোনোর পর থেকেই মানুষ যা করে চলেছে, আমরা পুড়তে চলেছি তারই আগুনে। এই গবেষণা পত্রের লেখকরা “বিশ্ব পরিবর্তনের পরিচালক” বলে যে বিষয়গুলো চিহ্নিত করেছেন- সেগুলোতে নজর দেওয়াটা জরুরী হয়ে পড়েছে। শুভস্য শীঘ্রম।